পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*& © রবীন্দ্র-রচনাবলী আনন্দ আমি আর রাখিতে পারিতেছি না। আমার কেবলই ভয় হইতেছে, পাছে কোনো বিঘ্ন ঘটে। আজ নলিনাক্ষের মা নিজে আমাকে ডাকিয় তাহার পুত্রের সঙ্গে তোমার বিবাহের প্রস্তাব করিয়াছেন।” * হেমনলিনী মুখ লাল করিয়া অত্যন্ত সংকুচিত হইয়া কহিল, “বাবা, তুমি কী বল ! না না, এ কখনো হইতেই পারে না।” নলিনাক্ষকে যে কখনো বিবাহ করা যাইতে পারে, এ সম্ভাবনার সন্দেহমাত্র হেমনলিনীর মাথায় আসে নাই। হঠাৎ পিতার মুখে এই প্রস্তাব শুনিয়া তাহাকে লজ্জায়-সংকোচে অস্থির করিয়া তুলিল । অন্নদাবাবু প্রশ্ন করিলেন, “কেন হইতে পারে না ?” হেমনলিনী কহিল, "নলিনাক্ষবাবু! এও কি কখনো হয়!” এরূপ উত্তরকে ঠিক যুক্তি বলা চলে না, কিন্তু যুক্তির অপেক্ষ ইহা অনেক গুণে প্রবল । হেম আর থাকিতে পারিল না, সে বারান্দায় চলিয়া গেল । অন্নদাবাবু অত্যন্ত বিমর্ষ হইয়া পড়িলেন। তিনি এরূপ বাধার কথা কল্পনাও করেন নাই। বরঞ্চ র্তাহার ধারণা ছিল, নলিনাক্ষের সহিত বিবাহের প্রস্তাবে হেম মনে মনে খুশিই হইবে। হতবুদ্ধি বৃদ্ধ বিষন্নমুখে কেরোসিনের আলোর দিকে চাহিয়া স্ত্রীপ্রকৃতির অচিন্তনীয় রহস্য ও হেমনলিনীর জননীর অভাব মনে মনে চিন্তা করিতে লাগিলেন । হেম অনেক ক্ষণ বারান্দার অন্ধকারে বসিয়া রহিল। তাহার পরে ঘরের দিকে চাহিয়া তাহার পিতার নিতান্ত হতাশ মুখের ভাব চোখে পড়িতেই তাহার মনে বাজিল। তাড়াতাড়ি তাহার পিতার চৌকির পশ্চাতে দাড়াইয়া তাহার মাথায় অঙ্গুলিসঞ্চালন করিতে করিতে কহিল, “বাবা চলো, অনেকক্ষণ থাবার দিয়াছে, খাবার ঠাগু হইয়া গেল।” অন্নদাবাবু যন্ত্রচালিতবং উঠিয়া খাবারের জায়গায় গেলেন, কিন্তু ভালো করিয়া থাইতেই পারিলেন না। হেমনলিনী সম্বন্ধে সমস্ত দুৰ্যোগ কাটিয়া গেল মনে করিয়া তিনি বড়োই আশান্বিত হইয়া উঠিয়াছিলেন, কিন্তু হেমনলিনীর দিক হইতেই যে এতবড়ো ব্যাঘাত আসিল ইহাতে তিনি অত্যন্ত দমিয়া গেছেন। আবার তিনি ব্যাকুল দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মনে ভাবিলেন, ‘হেম তবে এখনো রমেশকে ভুলিতে পারে নাই।’ অন্তদিন আহারের পরেই অন্নদাবাৰু শুইতে যাইতেন, আজ বারান্দায় ক্যামবিসের কেদারার উপরে বসিয়া বাড়ির বাগানের সন্মুখবর্তী ক্যান্টনমেন্টের নির্জন রাস্তার