পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি こや〉 নলিনাক্ষ কহিল, “সেজন্য নয় মা, যদি সে মেয়ে বাচিয়া থাকে ?” ক্ষেমংকরী। পাগল হইয়াছিস ? বাচিয়া থাকিলে তোকে খবর দিত না ? নলিনাক্ষ । আমার খবর সে কী জানে ? আমার চেয়ে অপরিচিত তাহার কাছে কে আছে ? বোধ হয় সে আমার মুখও দেখে নাই। কাশীতে আসিয়া তারিণী চাটুজ্জেকে আমার ঠিকানা জানাইয়াছি ; তিনিও কমলার কোনো খোজ পান নাই বলিয়া আমাকে চিঠি লিথিয়াছেন। ক্ষেমংকরী। তবে আবার কী । নলিনাক্ষ। আমি মনে মনে ঠিক করিয়াছি, পূরা একটি বংসর অপেক্ষা করিয়া তবে তাহার মৃত্যু স্থির করিব। ক্ষেমংকরী। তোমার সকল বিষয়েই বাড়াবাড়ি । আবার এক বৎসর অপেক্ষা করা কিসের জন্য ? নলিনাক্ষ। মা, এক বৎসরের আর দেরিই বা কিসের। এখন অস্ত্রান ; পৌষে বিবাহ হইতে পারিবে না ; তাহার পরে মাঘটা কাটাইয়া ফাল্গুন । ক্ষেমংকরী। আচ্ছা, বেশ । কিন্তু পাত্রী ঠিক রহিল। হেমনলিনীর বাপকে আমি কথা দিয়াছি । নলিনাক্ষ কহিল, “মা, মানুষ তো কেবল কথাটুকুমাত্রই দিতে পারে, সে কথার সফলতা দেওয়া যাহার হাতে র্তাহারই প্রতি নির্ভর করিয়া থাকিব ।” ক্ষেমংকরী । যাই হোক বাছা, তোমার এই ব্যাপারটা শুনিয়া এথনো আমার গা কঁাপিতেছে। নলিনাক্ষ । সে তো আমি জানি মা, তোমার এই মন স্বস্থির হইতে অনেক দিন লাগিবে। তোমার মনটা একবার একটু নাড়া পাইলেই তাহার আন্দোলন কিছুতেই আর থামিতে চায় না। সেইজন্যই তো মা, তোমাকে এরকম সব খবর দিতেই চাই नी । ক্ষেমংকরী। ভালোই কর বাছা,— আজকাল আমার কী হইয়াছে জানি না, একটা মন্দ-কিছু শুনিলেই তার ভয় কিছুতেই ঘোচে না। আমার একটা ডাকের চিঠি খুলিতে ভয় করে, পাছে তাহাতে কোনো কুসংবাদ থাকে। আমিও তো তোমাদের বলিয়া রাখিয়াছি, আমাকে কোনো খবর দিবার কোনো দরকার নাই ; আমি তো মনে করি, এ সংসারে আমি মরিয়াই গেছি, এখানকার আঘাত আমার উপরে আর কেন।