পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9\U)ხr রবীন্দ্র-রচনাবলী তুলসী কহিল, “তিনি এখানকার একটি বড়ো ডাক্তার বটে।” কমলা । তিনি থাকেন কোথায় ? তুলসী কহিল, “শহরেই থাকেন, এখান হইতে আধ ক্রোশটাক হইবে।” আহারের সামগ্ৰী অল্পস্বল্প যাহা-কিছু বাচাইতে পারিত, কমলা তাহাই বাড়ির চাকর-বাকরদের ভাগ করিয়া দিত। এজন্য সে ভংসনা অনেক সহিয়াছে, কিন্তু এ অভ্যাস ছাড়িতে পারে নাই। বিশেষত গৃহিণীর কড়া আইন অনুসারে এ বাড়ির লোকজনদের খাবার কষ্ট অত্যন্ত বেশি। তা ছাড়া কর্তা-গৃহিণীর খাইতে বেলা হইত ; ভূত্যেরা তাহার পরে থাইতে পাইত। তাহারা যখন আসিয়া কমলাকে জানাইত বামুনঠাকরুন, বড়ো ক্ষুধা পাইয়াছে তখন সে তাহাদিগকে কিছু-কিছু থাইতে না দিয়া কোনোমতেই থাকিতে পারিত না। এমনি করিয়া বাড়ির চাকর-বাকর দুই দিনেই কমলার একান্ত বশ মানিয়াছে । উপর হইতে রব আসিল, “রান্নাঘরের দরজার কাছে দাড়াইয়া কিসের পরামর্শ চলিতেছে রে তুলসী ? আমার বুঝি চোখ নাই মনে করিস ? শহরে যাইবার পথে এক বার বুঝি রান্নাঘর না মাড়াইয়া গেলে চলে না ? এমনি করিয়াই জিনিসপত্রগুলো সরাইতে হয় বটে ! বলি বামুনঠাকরুন, রাস্তায় পড়িয়া ছিলে, দয়া করিয়া তোমাকে আশ্রয় দিলাম, এমনি করিয়াই তাহার শোধ তুলিতে হয় বুঝি !” সকলেই তাহার জিনিসপত্র চুরি করিতেছে, এই সন্দেহ নবীনকালীকে কিছুতেই ত্যাগ করে না । যখন প্রমাণের লেশমাত্র ও না থাকে তখনো তিনি আন্দাজে ভংসনা করিয়া লন । তিনি স্থির করিয়াছেন যে, অন্ধকারে ঢেলা মারিলেও অধিকাংশ ঢেলা ঠিক জায়গায় গিয়া পড়ে আর তিনি যে সর্বদা সতর্ক আছেন ও তাহাকে ফাকি দিবার জো নাই, ভূত্যের। ইহা বুঝিতে পারে। 壟 # আজ নবীনকালীর তীব্রবাক্য কমলার মনেও বাজিল না। সে আজ কেবল কলের মতে কাজ করিতেছে, তাহার মনটা যে কোনখানে উধাও হইয়া গেছে তাহার ঠিকানা নাই । নীচে রান্নাঘরের দরজার কাছে কমলা দাড়াইয়া অপেক্ষা করিতেছিল। এমন সময় তুলসী ফিরিয়া আসিল, কিন্তু সে এক আসিল । কমলা জিজ্ঞাসা করিল, “তুলসী, কই