পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী কমলা নবীনকালীকে গিয়া কহিল, “আমি তে কাশী ছাড়িয়া যাইতে পারিব না।” নবীনকালী। আমরা পারিব, আর তুমি পরিবে না ! বড়ো ভক্তি দেখিতেছি। কমলা। আপনি যাহাই বলুন, আমি এখানেই থাকিব। নবীনকালী । আচ্ছা, তা কেমন থাক দেখা যাইবে । কমলা কহিল, “আমাকে দয়া করুন, অামাকে এখান হইতে লইয়া যাইবেন न ।” নবীনকালী। তুমি তো বড়ো ভয়ানক লোক দেখিতেছি । ঠিক যাবার সময় বাহান ধরিলে। আমরা এখন তাড়াতাড়ি লোক কোথায় খুজিয়া পাই। আমাদের কাজ চলিবে কী করিয়া । কমলার অনুনয়-বিনয় সমস্ত ব্যর্থ হইল ; কমলা তাহার ঘরে দ্বার বন্ধ করিয়া ভগবানকে ডাকিয়া কাদিতে লাগিল । GNO যেদিন সন্ধ্যার সময় নলিনাক্ষের সহিত বিবাহ লইয়া হেমনলিনীর সঙ্গে অন্নদীবাবুর আলোচনা হইয়াছিল সেইদিন রাত্রেই অন্নদাবাবুর আবার সেই শূলবেদনা দেখা দিল । রাত্রিটা কষ্টে কাটিয়া গেল। প্রাতঃকালে তাহার বেদনার উপশম হইলে তিনি র্তাহার বাড়ির বাগানে রাস্তার নিকটে শীতপ্রভাতের তরুণ স্বর্যালোকে সম্মুগে একটি টিপাই লইয়া বসিয়াছেন, হেমনলিনী সেইখানেই তাহাকে চা খাওয়াইবার ব্যবস্থা করিতেছে। গতরাত্রের কষ্টে অন্নদাবাবুর মুখ বিবর্ণ ও শীর্ণ হইয়া গেছে, তাহার চোখের নীচে কালি পড়িয়াছে, মনে হইতেছে যেন এক রাত্রির মধ্যেই তাহার বয়স অনেক বাড়িয়া গেছে । যখনি অন্নদাবাবুর এই ক্লিষ্ট মুখের প্রতি হেমনলিনীর চোখ পড়িতেছে তখনি তাহার বুকের মধ্যে যেন ছুরি বিধিতেছে। নলিনাক্ষের সহিত বিবাহে হেমনলিনীর অসম্মতিতেই যে বৃদ্ধ ব্যথিত হইয়াছেন, আর র্তাহার সেই মনোবেদনাই যে র্তাহার পীড়ার অব্যবহিত কারণ, ইহা হেমনলিনীর পক্ষে একান্ত পরিতাপের বিষয় হইয়া উঠিয়াছে। সে যে কী করিবে, কী করিলে বৃদ্ধ পিতাকে সান দিতে পরিবে, তাহা বার বার করিয়া ভাবিয়া কোনোমতেই স্থির করিতে পারিতেছিল না। . এমন-সময় হঠাৎ খুড়াকে লইয়া অক্ষয় সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল । হেমনলিনী তাড়াতাড়ি চলিয়া যাইবার উপক্রম করিতেই অক্ষয় কহিল, “আপনি