পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وام9b\ ভাসাইয়া দিয়া কহিল, “মা গো মা ! আমাদের এমন করিয়াও কাদাইয়া যাইতে इक्षु ।” খুড়া কহিলেন, “ও-সব কথা থাক শৈল, এখন উহার নাওয়া-খাওয়া সমস্ত ঠিক করিয়া দাও।” এমন সময় উমা মাসি মাসি’ করিয়া দুই হাত তুলিয়া ছুটিয়া বাহির হইয়া আসিল । কমলা তৎক্ষণাৎ তাহাকে কোলে তুলিয়া লইয়া বুকে চাপিয়া ধরিয়া চুমা খাইয়া খাইয়া অস্থির করিয়া দিল । শৈলজা কমলার রুক্ষ কেশ ও মলিন বস্ত্র দেখিয়া থাকিতে পারিল না । তাহাকে টানিয়া লইয়া গিয়া যত্ব করিয়া স্নান করাইল ; নিজের ভালো কাপড় একখানি বাহির করিয়া তাহাকে পরাইয়া দিল । কহিল, “কাল রাত্রে বুঝি ভালো করিয়া ঘুম হয় নাই। চোখ বসিয়া গেছে যে । ততক্ষণ তুই বিছানায় একটু গড়াইয়া নে। আমি রান্না সারিয়া আসিতেছি।” কমলা কহিল, “না দিদি, তোমার সঙ্গে, চলে, আমিও রান্নাঘরে যাই ।” দুই সর্থীতে একত্রে রণধিতে গেল । চক্রবর্তীখুড়া অক্ষয়ের পরামর্শে যখন কাশীতে আসিবার জন্য প্রস্তুত হইলেন শৈলজা ধরিয়া পড়িল, “বাবা, আমিও তোমাদের সঙ্গে কাশী যাইব ।” খুড়া কহিলেন, “বিপিনের তো এখন ছুটি নাই ।” শৈল কহিল, “ত হোক, আমি একলাই যাইব । মা আছেন, উহার অসুবিধা হইবে না।” স্বামীর সহিত এরূপ বিচ্ছেদের প্রস্তাব শৈল পূর্বে কোনোদিন করে নাই । খুড়াকে রাজি হইতে হইল। গাজিপুর হইতে যাত্রা করিলেন। কাশী স্টেশনে নামিয়া দেখেন, উমেশও গাড়ি হইতে নামিতেছে — “আরে তুই এলি কেন রে।” সকলে যে কারণে আসিয়াছেন তাহারও সেই একই কারণ। কিন্তু উমেশ আজকাল খুড়ার গৃহকার্যে নিযুক্ত হইয়াছে ; সে এরূপ অকস্মাং চলিয়া আসিলে গৃহিণী অত্যন্ত রাগ করিবেন জানিয়া সকলে মিলিয়া অনেক চেষ্টা করিয়া উমেশকে গাজিপুরে ফিরাইয়া পাঠান। তাহার পরে কী ঘটিয়াছে তাহা সকলেই জানেন। সে গাজিপুরে কোনোমতেই টিকিতে পারিল না। গৃহিণী তাহাকে বাজার করিতে পাঠাইয়াছিলেন, সেই বাজারের পয়সা লইয়া সে একেবারে গঙ্গা পার হইয়া স্টেশনে জাসিয়া উপস্থিত। চক্রবর্তী-গৃহিণী সেদিন এই ছোকরাটির জন্য বৃথা অপেক্ষ করিয়াছিলেন ।