পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిసెఇ রবীন্দ্র-রচনাবলী র্তাহার স্ত্রী জলে ডুবিয়া মারা যাওয়াতে তিনি সেই অবধি একরকম ব্রহ্মচারীর মতোই আছেন।” ক্ষেমংকরী কহিলেন, “সে যাহা হইয়াছে হইয়াছে, ও কথা আর তুলিবেন না— মনে করিলেও আমার গায়ে কণটা দিয়া ওঠে ।” খুড়া কহিলেন, “যদি অনুমতি করেন তবে মেয়েটিকে আপনার কাছে রাখিয়া এখন বিদায় হই । মাঝে মাঝে আসিয়া দেখিয়া যাইব । ইহার একটি বড়ো বোন আছে, সেও আপনাকে প্রণাম করিতে আসিবে ।” খুড়া চলিয় গেলে ক্ষেমংকরী কমলাকে কাছে টানিয়া লইয়া কহিলেন, “এসে তো মা, দেখি। তোমার বয়স তো বেশি নয়। আহা, তোমাকে ফেলিয়া যাইতে পারে, জগতে এমন পাষাণও আছে ! আমি আশীর্বাদ করিতেছি, সে আবার ফিরিয়া আসিবে। বিধাতা এত রূপ কখনো বৃথা নষ্ট করিবার জন্য গড়েন নাই ।” বলিয়া কমলার চিবুক স্পর্শ করিয়া অঙ্গুলির দ্বারা চুম্বন গ্রহণ করিলেন । ক্ষেমংকরী কহিলেন, “এখানে তোমার সমবয়সী সঙ্গিনী কেহ নাই, একলা আমার কাছে থাকিতে পারিবে তো ?” কমলা তাহার দুই বড়ে বড়ো স্নিগ্ধ চক্ষে সম্পূর্ণ আত্মনিবেদন করিয়া কহিল, “পারিব মা ।” ক্ষেমংকরী কহিলেন, “তোমার দিন কাটিবে কী করিয়া, আমি তাই ভাবিতেছি ।” কমলা কহিল, “আমি তোমার কাজ করিব।” ক্ষেমংকরী । পোড়াকপাল! আমার আবার কাজ ! সংসারে ওই তো আমার একটিমাত্র ছেলে, সেও সন্ন্যাসীর মতো থাকে— কখনও যদি বলিত ‘মা, এইটে আমার দরকার আছে, আমি এইটে খেতে চাই, আমি এইটে ভালোবাসি’, তবে আমি কত খুশি হইতাম— তাও কখনো বলে না । রোজগার ঢের করে, হাতে কিছুই রাখে না ; কত সংকাজে যে কত দিকে খরচ করে তাহা কাহাকে জানিতেও দেয় না । দেখো বাছা, আমার কাছে যখন তোমাকে চব্বিশ ঘণ্টা থাকিতে হইবে তখন এ কথা আগে হইতেই বলিয়া রাখিতেছি, আমার মুখে আমার ছেলের গুণগান বার বার শুনিয় তোমার বিরক্ত ধরিবে, কিন্তু ওইটে তোমাকে সহ করিয়া যাইতে হইবে। কমলা পুলকিতচিত্তে চক্ষু নত করিল। ক্ষেমংকরী কহিলেন, “আমি তোমাকে কী কাজ দিব, তাই ভাবিতেছি । সেলাই করিতে জান ?” কমলা কহিল, “ভালো জানি না মা ।”