পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రిమ\9 রবীন্দ্র-রচনাবলী পরদিন কমলাই ঘরকন্নার সমুদয় ভার গ্রহণ করিল। নলিনাক্ষ পূর্বদিকের বারান্দায় এক অংশ ঘিরিয়া লইয়া মার্বেল দিয়া বাধাইয়া একটি ছোটো ঘর করিয়া লইয়াছিল, ইহাই তাহার উপাসনাগৃহ ছিল, এবং মধ্যাহ্নে এইখানেই সে আসনের উপর বসিয়া অধ্যয়ন করিত। সেদিন প্রাতে সে ঘরে নলিনাক্ষ প্রবেশ করিয়াই দেখিল, ঘরটি ধৌত, মার্জিত, পরিচ্ছন্ন ; ধুনা জালাইবার জন্য একটি পিতলের ধুতুচি ছিল, সেটি আজ সোনার মতো ঝক ঝক করিতেছে। শেলফের উপরে তাহার কয়েকখানি বই ও পুথি স্থসজ্জিত করিয়া বিন্যস্ত হইয়াছে। এই গৃহখানির যত্বমার্জিত নির্মলতার উপরে মুক্তদ্বার দিয়া প্রভাতরৌদ্রের উজ্জলতা পরিব্যাপ্ত হইয়াছে, দেখিয়। স্বান হইতে সদ্যঃপ্রত্যাগত নলিনাক্ষের মনে বিশেষ একটি তৃপ্তির সঞ্চার, হইল। কমলা প্রভাতে ঘটিতে গঙ্গাজল লইয়া ক্ষেমংকরীর বিছানার পাশে আসিয়া উপস্থিত হইল। তিনি তাহার স্নাতমূর্তি দেখিয়া কহিলেন, “এ কী মা, তুমি একলাই ঘাটে গিয়াছিলে ? আমি আজ ভোর হইতে ভাবিতেছিলাম, আমার অস্থখ, তুমি কাহার সঙ্গে স্নানে যাইবে । কিন্তু তোমার অল্প বয়স, এমন করিয়া একলা—” । কমলা কহিল, “মা, আমার বাপের বাড়ির একটা চাকর থাকিতে পারে নাই, আমাকে দেখিতে কাল রাত্রেই এখানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। তাহাকে সঙ্গে লইয়াছিলাম।” ক্ষেমংকরী কহিলেন, “আহ, তোমার খুড়িমা বোধ হয় অস্থির হইয়া উঠিয়াছেন, চাকরটাকে পাঠাইয়া দিয়াছেন । তা, বেশ হইয়াছে— সে তোমার কাছেই থাকু-না, তোমার কাজে-কর্মে সাহায্য করিবে । কোথায় সে, তাহাকে ডাকো-না ।” কমলা উমেশকে লইয়া হাজির করিল। উমেশ গড় হইয়া ক্ষেমংকরীকে প্রণাম করিতে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোর নাম কী রে ?” সে কহিল, “আমার নাম উমেশ ।” বলিয়া অকারণ-বিকশিত হাতে তাহার মুখ ভরিয়া গেল। ক্ষেমংকরী হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “উমেশ, তোর এই বাহারে কাপড়খানা তোকে কে দিল রে ?” উমেশ কমলাকে দেখাইয়া কহিল, “মা দিয়াছেন।” ক্ষেমংকরী কমলার দিকে চাহিয়া পরিহাস করিয়া কহিলেন, “আমি বলি, উমেশ বুঝি ওর শাশুড়ির কাছ হইতে জামাইষষ্ঠী পাইয়াছে।” O ক্ষেমংকরীর স্নেহ লাভ করিয়া উমেশ এইখানেই রহিয়া গেল। উমেশকে সহায় করিয়া কমলা দিনের বেলাকার সমস্ত কাজকর্ম শেষ করিয়া ফেলিল। স্বহস্তে নলিনাক্ষের শোবার ঘর ঝাট দিয়া, তাহার বিছানা রৌত্ৰে দিয়া, তুলিয়, সমস্ত