পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি \లివెవె হেমনলিনী চলিয়া গেলে ক্ষেমংকরী নলিনাক্ষকে ভাব্রুিয়া পাঠাইলেন ; কহিলেন, "নলিন, আর আমি দেরি করিতে পারিব না।” নলিনাক্ষ কহিল, “ব্যাপারখানা কী ?” ক্ষেমংকরী কহিলেন, “আমি আজ হেমকে সব কথা খুলিয়া বলিলাম ; সে তো রাজি হইয়াছে, এখন তোমার কোনো ওজর আমি শুনিতে চাই না। আমার শরীর তো দেখিতেছিস । তোদের একটা স্থিতি না করিয়া আমি কোনোমতেই স্বস্থির হইতে পারিতেছি না। অর্ধেক রাত্রে ঘুম ভাঙিয়া আমি ওই কথাই ভাবি।” নলিনাক্ষ কহিল, ”আচ্ছ মা, ভাবিয়ে না, তুমি ভালো করিয়া ঘুমাইয়ে, তুমি যেমন ইচ্ছা কর তাহাই হইবে।” নলিনাক্ষ চলিয়া গেলে ক্ষেমংকরী ডাকিলেন, “হরিদাসী !” কমলা পাশের ঘর হইতে চলিয়া আসিল । তখন অপরাহ্লের আলোক স্নান হইয়া ঘর প্রায় অন্ধকার হইয়া আসিয়াছে। হরিদাসীর মুখ ভালো করিয়া দেখা গেল না। ক্ষেমংকরী কহিলেন, “বাছা, এই ফুলগুলিতে জল দিয়া ঘরে সাজাইয়া রাখো ।” বলিয়া বাছিয়া একটি গোলাপ তুলিয়া ফুলের সাজিটি কমলার দিকে অগ্রসর করিয়া দিলেন । 蘇 কমলা তাহার মধ্যে কতকগুলি ফুল তুলিয়া একটি থালায় সাজাইয়া নলিনাক্ষের উপাসনাগৃহের আসনের সম্মুখে রাখিল। আর-কতকগুলি একটি বাটিতে করিয়া নলিনাক্ষের শোবার ঘরে টিপাইয়ের উপর রাখিয়া দিল। বাকি কয়েকটি ফুল লইয়া সেই দেয়ালের গায়ের আলমারিটা খুলিয়া এবং সেই খড়মজোড়ার উপর ফুলগুলি রাথিয় তাহার উপরে মাথা ঠেকাইয়া প্রণাম করিতেই তাহার চোখ দিয়া আজ ঝর ঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল। এই খড়ম ছাড়া জগতে তাহার আর-কিছুই নাই— পদসেবার অধিকারও হারাইতে বসিয়াছে । এমন-সময়ে হঠাৎ ঘরে কে প্রবেশ করিতেই কমলা ধড়ফড়, করিয়া উঠিয়া পড়িল । তাড়াতাড়ি আলমারির দরজা বন্ধ করিয়া দিয়া দেখিল, নলিনাক্ষ। কোনো দিকে কমলা পালাইবার পথ পাইল না— লজ্জায় কমলা সেই আসন্ন সায়াহের অন্ধকারে মিশাইয়া গেল না কেন । নলিনাক্ষ ঘরের মধ্যে কমলাকে দেখিয়া বাহির হইয়া গেল। কমলাও আর বিলম্ব না করিয়া ক্রতপদে অন্ত ঘরে চলিয়া গেল। তখন নলিনাক্ষ পুনর্বার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। মেয়েটি আলমারি খুলিয়া কী করিতেছিল, তাহাকে দেখিয়া তাড়াতাড়ি বদ্ধ করিলই বা কেন ? কৌতুহলবশত নলিনাক্ষ আলমারি খুলিয়া