পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

८नौकांफूचेि 8 لا ه ঐশ্বৰ্ষ আমি যেন সম্পূর্ণভাবে তাহাকেই প্রত্যপণ করিতে পারি, এই আমার একমাত্র প্রার্থনা।’ তাহার পরে খাত বন্ধ করিয়া হেমনলিনী সেই নক্ষত্রখচিত অন্ধকারে নিন্তব্ধ শীতের রাত্রে র্কীকর-বিছানো বাগানের পথে অনেক ক্ষণ পায়চারি করিয়া বেড়াইতে লাগিল । অনন্ত আকাশ তাহার অশ্রধৌত অস্তঃকরণের মধ্যে নিঃশৰ শাস্তিমন্ত্র উচ্চারণ করিল। পরদিন অপরাত্ত্বে যখন অন্নদাবাবু হেমনলিনীকে লইয়া নলিনাক্ষের বাড়ি যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতেছেন, এমন-সময় তাহার দ্বারের কাছে এক গাড়ি আসিয়া দাড়াইল । কোচবাক্সের উপর হইতে নলিনাক্ষের এক চাকর নামিয়া আসিয়া খবর দিল, “ম আসিয়াছেন।” অন্নদাবাবু তাড়াতাড়ি দ্বারের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইতেই ক্ষেমংকরী গাড়ি হইতে নামিয়া আসিলেন। অন্নদাবাবু কহিলেন, “আজ আমার পরম সৌভাগ্য ।” ক্ষেমংকরী কহিলেন, “আজ আপনার মেয়ে দেখিয়া আশীর্বাদ করিয়া যাইব, তাই আসিয়াছি।” এই বলিয়া তিনি ঘরে প্রবেশ করিলেন। অন্নদাবাবু তাহাকে বসিবার ঘরে যত্বপূর্বক একটা সোফার উপরে বসাইয়া কহিলেন, “আপনি বস্বন, আমি হেমকে ডাকিয়া আনিতেছি।” হেমনলিনী বাহিরে যাইবার জন্য সাজিয়া প্রস্তুত হইতেছিল, ক্ষেমংকরী আসিয়াছেন শুনিয়া তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া তাহাকে প্রণাম করিল ; ক্ষেমংকরী কহিলেন, “সৌভাগ্যবতী হইয়া তুমি দীর্ঘায়ু লাভ করে। দেখি মা, তোমার হাতখানি দেখি।” বলিয়া একে একে তাহার দুই হাতে মকরমুখে মোট সোনার বালা দুইগাছি পরাইয়া দিলেন। হেমনলিনীর কৃশ হাতে মোট বালাজোড়া ঢলঢল করিতে লাগিল। বালা পরানো হইলে হেমনলিনী আবার ভূমিষ্ঠ হইয়া ক্ষেমংকরীকে প্রণাম করিল ; ক্ষেমংকরী দুই হাতে তাহার মুখ ধরিয়া তাহার ললাট চুম্বন করিলেন। এই আশীর্বাদে ও আদরে হেমনলিনীর হৃদয় একটি স্বগভীর মাধুর্যে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। ক্ষেমংকরী কহিলেন, “বেয়াইমশায়, কাল আমার ওখানে আপনাদের দুজনেরই সকালে নিমন্ত্রণ রহিল ।” পরদিন প্রাতঃকালে হেমনলিনীকে লইয়া অন্নদাবাবু যথানিয়মে বাহিরে চা খাইতে বসিয়াছেন। অন্নদাবাবুর রোগক্লিষ্ট মুখ এক রাত্রির মধ্যেই আনন্দে সরস ও নবীন হইয়া উঠিয়াছে। ক্ষণে ক্ষণে হেমনলিনীর শাস্তোজ্জল মুখের দিকে চাহিতেছেন