পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী جه 8 আর তাহার মনে হইতেছে, আজ যেন তাহার পরলোকগত পত্নীর মঙ্গলমধুর আবির্ভাব তাহার কন্যাকে পরিবেষ্টত করিয়া রহিয়াছে এবং স্থদুরব্যাপ্ত অশ্রজলের আভাসে স্বখের অত্যুজ্জলতাকে স্নিগ্ধগম্ভীর করিয়া তুলিয়াছে। অন্নদাবাবুর আজ কেবলই মনে হইতেছে, ক্ষেমংকরীর নিমন্ত্রণে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইবার সময় হইয়াছে, আর দেরি করা উচিত নহে। হেমনলিনী তাহাকে বার বার করিয়া স্মরণ করাইতেছে, এখনো অনেক সময় আছে, এখনো সবে আটটা । অন্নদাবাবু কহিতেছেন, “নাহিয়া প্রস্তুত হইয়া লইতে তো সময় চাই। দেরি করার চেয়ে বরঞ্চ একটু সকাল-সকাল যাওয়া ভালো।” ইতিমধ্যে কতকগুলি তোরঙ্গ বিছানা প্রভৃতি বোঝাই -সমেত এক ভাড়াটে গাড়ি আসিয়া বাগানের প্রবেশপথের সম্মুখে থামিল । সহসা হেমনলিনী "দাদা আসিয়াছেন” বলিয়া অগ্রসর হইয়া গেল। যোগেন্দ্র হাস্যমুখে গাড়ি হইতে নামিল ; কহিল, "কী হেম, ভালো আছ তো ?” হেমনলিনী জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার গাড়িতে আর-কেহ আছে নাকি ?” যোগেন্দ্র হাসিয়া কহিল, “আছে বৈকি। বাবার জন্য একটি ক্রিস্ট মাসের উপহার আনিয়াছি।” ইতিমধ্যে রমেশ গাড়ি হইতে নামিয়া পড়িল । হেমনলিনী একবার মুহূর্তকাল চাহিয়াই তৎক্ষণাং পশ্চাং ফিরিয়া চলিয়া গেল । যোগেন্দ্র ডাকিল, “হেম, যেয়ে না, কথা আছে, শোনো ।” এ আহবান হেমনলিনীর কানেও পৌছিল না, সে যেন কোন প্রেতমূর্তির অনুসরণ হইতে আত্মরক্ষা করিবার জন্য দ্রুতবেগে চলিল । রমেশ ক্ষণকালের জন্য একবার থমকিয়া দাড়াইল ; অগ্রসর হইবে কি ফিরিয়া যাইবে ভাবিয়া পাইল না। যোগেন্দ্ৰ কহিল, "রমেশ এসো, বাবা এইখানে বাহিরেই বসিয়া আছেন।” বলিয়া রমেশের হাত ধরিয়া তাহাকে অন্নদাবাবুর কাছে আনিয়া উপস্থিত করিল। অন্নদাবাবু দূর হইতেই রমেশকে দেখিয়া হতবুদ্ধি হইয়া গেছেন। তিনি মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে ভাবিলেন, এ আবার কী বিঘ্ন উপস্থিত হইল! রমেশ অন্নদাবাবুকে নত হইয়া নমস্কার করিল। অন্নদাবাবু তাহাকে বসিবার চৌকি দেখাইয়া দিয়া যোগেন্দ্রকে কহিলেন, “যোগেন, তুমি ঠিক সময়েই আসিয়াছ। আমি তোমাকে টেলিগ্রাফ করিব মনে করিতেছিলাম।” যোগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কেন ?”