পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্ষেমংকরী কহিলেন, “তা, হোক দেরি। আজ আমি তোমাকে না সাজাইয়া যাইব না।” সাজ সারা হইলে তিনি কমলাকে সঙ্গে করিয়া চলিলেন, “এসো এসো মা, লজ্জা করিয়ো না। তোমাকে দেখিয়া কলেজে-পড়া বিদুষী রূপসীরা লজ্জা পাইবেন, তুমি সকলের কাছে মাথা তুলিয়া দাড়াইতে পার।” এই বলিয়া ষে ঘরে অন্নদাবাবুরা বসিয়াছিলেন সেই ঘরে ক্ষেমংকরী জোর করিয়া কমলাকে টানিয়া লইয়া গেলেন। গিয়া দেখিলেন, নলিনাক্ষ র্তাহীদের সঙ্গে আলাপ করিতেছে । কমলা তাড়াতাড়ি ফিরিয়া যাইবার উপক্রম করিল, কিন্তু ক্ষেমংকরী তাহাকে ধরিয়া রাখিলেন ; কহিলেন, “লজ্জা কী মা, লজ্জা কিসের ! সব আপনার লোক ৷” কমলার রূপে এবং সজ্জায় ক্ষেমংকরী নিজের মনে একটা গর্ব অষ্টভব করিতেছিলেন ; তাহাকে দেখিয়া সকলে চমৎকৃত হউক, এই তাহার ইচ্ছা । পুত্রাভিমানিনী জননী তাহার নলিনাক্ষের প্রতি হেমনলিনীর অবজ্ঞা কল্পনা করিয়া আজি উত্তেজিত হইয়া উঠিয়াছেন, আজ নলিনাক্ষের কাছেও হেমনলিনীকে খর্ব করিতে পারিলে তিনি খুশি হন। কমলাকে দেখিয়া সকলে চমৎকৃত হইল। হেমনলিনী প্রথম দিন যখন তাহার পরিচয় লাভ করিয়াছিল তখন কমলার সাজসজ্জা কিছুই ছিল না ; সে মলিনভাবে সংকুচিত হইয়া এক ধারে বসিয়া ছিল, তাও বেশিক্ষণ ছিল না । তাহাকে সেদিন ভালো করিয়া দেখাই হয় নাই। আজ মুহূর্তকাল সে বিস্মিত হইয়া রহিল, তাহার পরে উঠিয়া দাড়াইয়া লজ্জিত কমলার হাত ধরিয়া তাহাকে আপনার পাশে বসাইল । ক্ষেমংকরী বুঝিলেন, তিনি জয়লাভ করিয়াছেন ; উপস্থিত-সভায় সকলকেই মনে মনে স্বীকার করিতে হইয়াছে, এমন রূপ দৈবপ্রসাদেই দেখিতে পাওয়া যায়। তখন তিনি কমলাকে কহিলেন, “যাও তো মা, তুমি হেমকে তোমার ঘরে লইয়া গল্পসল্প করো গে যাও । আমি ততক্ষণ খাবারের জায়গা করি গে।” কমলার মনের মধ্যে একটা আন্দোলন উপস্থিত হইল। সে ভাবিতে লাগিল, ‘হেমনলিনীর আমাকে কেমন লাগিবে কে জানে।’ এই হেমনলিনী এক দিন এই ঘরের বধু হইয়া আসিবে, কত্ৰী হইয়া উঠিবে—