পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२० রবীন্দ্র-রচনাবলী . কমলা কহিল, “এখন যা হইয়াছে এই সহজ, এর চেয়ে সহজ আর-কিছু হইতে পারে না। আমি বেশ সুখে আছি, আমাকে এর চেয়ে মুখ দিতে গিয়া আবার আমার ভাগ্যকে ফিরাইয়া দিয়ে না খুড়ামশায়। আমি তোমাদের পায়ে ধরি, তোমরা কাহাকেও কিছু বলিয়ে না, আমাকে এই ঘরের একটা কোণে ফেলিয়া আমার কথা ভুলিয়া যাও। আমি খুব সুখে আছি।” ..طالی বলিতে বলিতে কমলার দুই চোখ দিয়া ঝর ঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল । চক্রবর্তী ব্যস্তসমস্ত হইয়া কহিলেন, “ও কী মা, কাদ কেন ? তুমি যাহা বলিতেছ আমি বেশ বুঝিতেছি। তোমার এই শাস্তিতে আমরা কি হাত দিতে পারি। বিধাতা আপনি যা ধীরে ধীরে করিতেছেন, আমরা নির্বোধের মতো তার মধ্যে পড়িয়া কি সমস্ত ভণ্ডুল করিয়া দিব ? কোনো ভয় নাই। আমার এত বয়স হইয়া গেল, আমি কি স্থির হইয়া থাকিতে জানি না ?” এমন-সময় উমেশ ঘরে প্রবেশ করিয়া তাহার আকর্ণবিস্ফারিত হাস্য লইয়া দাড়াইল । খুড়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী রে উমশে, খবর কী ?” উমেশ কহিল, "রমেশবাবু নীচে দাড়াইয়া আছেন, ডাক্তারবাবুর কথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন।” * কমলার মুখ পাংশুবর্ণ হইয়া গেল। খুড়া তাড়াতাড়ি উঠিয়া পড়িলেন ; কহিলেন, “ভয় নাই মা, আমি সব ঠিক করিয়া দিতেছি ।” খুড়ীচে আসিয়া একেবারে রমেশের হাত ধরিয়া কহিলেন, “আম্বন রমেশবাবু, রাস্তায় বেড়াইতে বেড়াইতে আপনার সঙ্গে গোটা-দুয়েক কথা কহিব ।” t রমেশ আশ্চর্য হইয়া কহিল, “খুড়ামশায়, আপনি এখানে কোথা হইতে ?” খুড়া কহিলেন, “আপনার জন্যই আছি ; দেখা হইল, বড়ো ভালো হইল। আসুন, আর দেরি নয়, কাজের কথাটা শেষ করিয়া ফেলা যাক ৷” বলিয়া রমেশকে রাস্তায় টানিয়া লইয়া কিছুদূর গিয়া কহিলেন, “রমেশবাবু, আপনি এ বাড়িতে কেন আসিয়াছেন ?” রমেশ কহিল, "নলিনাক্ষ ডাক্তারকে খুজিতে আসিয়াছিলাম। র্তাহাকে কমলার কথা আগাগোড়া সমস্ত খুলিয়া বলা উচিত স্থির করিয়াছি। আমার এক-একবার মনে হয়, হয়তো কমলা বাচিয়া আছে।” ந் খুড়া কহিলেন, “যদি কমলা বাচিয়াই থাকে এবং যদি নলিনাক্ষের সঙ্গে তার দেখা হয়, তবে আপনার মুখে নলিনাক্ষ সমস্ত ইতিহাস শুনিলে কি স্থবিধা হইবে ?