নৌকাডুবি r 8දී.එ চাবি ছিল, সেও কৌশল করিয়া হরিদাসী আত্মসাৎ করিয়াছে— চক্রবর্তমশায়, আপনার এই ডাকাত মেয়েটির জন্তে আপনি আর কী চান বলুন দেখি ! এখন সব চেয়ে বড়ো ডাকাতি হয় যদি আপনি বলেন, এই মেয়েটিকে আমরা লইয়া যাইব ।” চক্রবর্তী কহিলেন, “আমি যেন বলিলাম, কিন্তু মেয়েটি কি নড়িবে ? তা, মনেও করিবেন না। উহাকে আপনারা এমন ভুলাইয়াছেন যে, আজ আপনারা ছাড়া ও আর পৃথিবীতে কাহাকেও জানে না । দুঃখের জীবনে এতদিন পরে ও আপনাদের কাছেই আজ শাস্তি পাইয়াছে— ভগবান ওর সেই শাস্তি নির্বিগ্ন করুন, আপনার চিরদিন ওর পরে প্রসন্ন থাকুন, আমরা উহাকে সেই আশীৰ্বাদ করি।” বলিতে বলিতে চক্রবর্তীর চক্ষু সজল হইয়া আসিল । নলিনাক্ষ কিছু না বলিয়া স্তন্ধ হইয়া চক্রবর্তীর কথা শুনিতেছিল ; যখন সকলে বিদায় লইয়া গেলেন তখন ধীরে ধীরে সে আপনার ঘরে গিয়া প্রবেশ করিল। তখন শীতের স্বর্যাস্তকাল তাহার সমস্ত শয়নঘরটিকে নববিবাহের রক্তিমছটায় রঞ্জিত করিয়া তুলিয়াছিল। সেই রক্তবর্ণের আভা নলিনাক্ষের সমস্ত রোমকূপ ভেদ করিয়া তাহার অন্তঃকরণকে যেন রাঙাইয়া তুলিল । আজ সকালে নলিনাক্ষের এক হিন্দুস্থানি বন্ধুর কাছ হইতে এক টুকরি গোলাপ আসিয়াছিল। ঘর সাজাইবার জন্ত সেই গোলাপের টুকরি ক্ষেমংকরী কমলার হাতে দিয়াছিলেন । নলিনাক্ষের শয়নঘরের প্রান্তে একটি ফুলদানি হইতে সেই গোলাপের গন্ধ তাহার মস্তিষ্কের মধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিল। সেই নিস্তব্ধ ঘরের বাতায়নে আরক্ত সন্ধ্যার সঙ্গে গোলাপের গন্ধ মিশিয়া নলিনাক্ষের মনকে কেমন যেন উতলা করিয়া তুলিল। এতদিন তাহার বিশ্বে চারি দিকে সংযমের শান্তি, জ্ঞানের গভীরতা ছিল, আজ সেখানে হঠাৎ এমন নানা স্বরের নহবত বাজিয়া উঠিল কোথা হইতে— কোন অদৃপ্ত নৃত্যের চরণক্ষেপে ও নৃপুরঝংকারে আজ আকাশতল এমন চঞ্চল হইয়া উঠিতে লাগিল । নলিনাক্ষ জানলা হইতে ফিরিয়া ঘরের মধ্যে চাহিয়া দেখিল, তাহার বিছানার শিয়রের কাছে কুলুঙ্গির উপরে গোলাপফুলগুলি সাজানো রহিয়াছে। এই ফুলগুলি জানি না কাহার চোখের মতে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, নিঃশব্দ আত্মনিবেদনের মতো তাহার হৃদয়ের দ্বারপ্রাস্তে নত হইয়া পড়িল । নলিনাক্ষ ইহার মধ্যে একটি ফুল তুলিয়া লইল— সেটি কাচা সোনার রঙের হলদে গোলাপ, পাপড়িগুলি খোলে নাই, কিন্তু গন্ধ লুকাইতে পারিতেছে না। সেই গোলাপটি হাতে লইতেই যেন সে কাহার আঙুলের মতে তাহার আঙলকে স্পর্শ
