পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२8 রবীন্দ্র-রচনাবলী করিল, তাহার শরীরের সমস্ত স্নায়ুতন্তুকে রিমিঝিমি করিয়া বাজাইয়া তুলিল। নলিনাক্ষ সেই স্নিগ্ধকোমল ফুলটিকে নিজের মুখের উপরে, চোখের পল্লবের উপরে বুলাইতে লাগিল! দেখিতে দেখিতে সন্ধ্যাকাশ হইতে অস্তস্বর্ষের আভা মিলাইয়া আসিল । নলিনাক্ষ ঘর হইতে বাহির হইবার পূর্বে একবার তাহার বিছানার কাছে গিয়া শয্যার আচ্ছাদনটি তুলিয়া ফেলিল এবং মাথার বালিশের উপর সেই গোলাপফুলটি রাখিল । রাখিয়া উঠিয়া আসিবে, এমন সময় থাটের ও পাশে মেঝের উপরে ও কে অঞ্চলে মুখ ঝণপিয়া লজ্জায় একেবারে মাটিতে মিশাইতে চাহিল। হায় রে কমলা, লজ্জা রাখিবার আর স্থান নাই। সে আজ কুলুঙ্গিতে গোলাপ সাজাইয়া স্বহস্তে নলিনাক্ষের বিছানা করিয়া বাহির হইয়া আসিতেছিল, এমন সময়ে হঠাৎ নলিনাক্ষের পায়ের শব্দ শুনিয়া তাড়াতাড়ি বিছানার ও পাশে গিয়া লুকাইয়াছিল— এখন পালানোও অসম্ভব, লুকানোও কঠিন। তাহার রাশীকৃত-লজ্জা-সমেত এই ধূলির উপরে সে এমন একান্তভাবে ধরা পড়িয়া গেল । নলিনাক্ষ এই লজ্জিতাকে মুক্তি দিবার জন্য তাড়াতাড়ি ঘর হইতে বাহির হইবার উপক্রম করিল। দরজা পর্যন্ত গিয়া একবার দাড়াইল । কিছুক্ষণ কী ভাবিয়া সে ধীরে ধীরে ফিরিয়া আসিল ; কমলার সম্মুখে দাড়াইয়া কহিল, “তুমি ওঠে, আমার কাছে তোমার কোনো লজ্জা নাই ।” ○> পরদিন সকালেই কমলা খুড়ামশায়ের বাসায় গিয়া উপস্থিত হইল। যখন নির্জনে একটু অবকাশ পাইল অমনি সে শৈলজাকে জড়াইয়া ধরিল ; শৈল কমলার চিবুক ধরিয়া কহিল, “কী বোন, এত খুশি কিসের ?” 睿 কমলা কহিল, “আমি জানি না দিদি, কিন্তু আমার মনে হইতেছে, যেন আমার জীবনের সমস্ত ভার চলিয়া গেছে ।” শৈল। বল-না, সব কথা বল-না আমাকে । এই তো কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা ছিলাম, তার পরে তোর হইল কী ? কমলা। এমন কিছুই হয় নাই, কিন্তু আমার কেবলই মনে হইতেছে, আমি যেন র্তাহাকে পাইয়াছি, ঠাকুর যেন আমার পরে সদয় হইয়াছেন। শৈল। তাই হোক বোন, কিন্তু আমার কাছে কিছু লুকোস নে।