পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি g C: কমলা। আমার লুকাইবার কিছুই নাই দিদি, কী ষে বলিবার আছে, তাও, খুজিয়া পাই না। রাত পোহাইতেই সকালে উঠিয়া মনে হইল আমার জীবনট সার্থক— আমার সমস্ত দিনটা এমন মিষ্ট, আমার সমস্ত কাজ এমন হালকা হইয়া গেছে, তাহা আমি বলিতে পারি না। আমি ইহার চেয়ে আর বেশি কিছুই চাই না— কেবল ভয় হয় পাছে এটুকু নষ্ট হয়— আমি যে প্রতিদিন এমন করিয়া দিন কাটাইতে পারিব, আমার ভাগ্য যে এত প্রসন্ন হইবে, তাহা আমি মনে করিতেই পারি না। শৈল। আমি তোকে বলিতেছি বোন, তোর ভাগ্য তোকে এইটুকু দিয়াই ফাকি দিবে না, তোর যাহা পাওনা আছে তার সমস্তই শোধ হইবে । * কমলা। না না দিদি, ও কথা বলিয়ে না— আমার সমস্ত শোধ হইয়াছে, জামি বিধাতাকে কোনো দোষ দিই না, আমার কোনো অভাব নাই । এমন সময় খুড়া আসিয়া কহিলেন, “মা, তোমাকে তো একবার বাহিরে আসিতে হইতেছে, রমেশবাবু আসিয়াছেন।” । | খুড়া এতক্ষণ রমেশের সঙ্গেই কথা কহিতেছিলেন। রমেশকে বলিতেছিলেন, “আপনার সঙ্গে কমলার কী সম্বন্ধ, তাহা আমি সমস্তই জানিয়াছি। এখন আপনার প্রতি আমার পরামর্শ এই যে, আপনার জীবন এখন পরিষ্কার হইয়া গেছে, এখন আপনি কমলার সমস্ত প্রসঙ্গ একেবারে পরিত্যাগ করুন। কমলা সম্বন্ধে যদি কোনো গ্রন্থি কোথাও মোচন করিবার প্রয়োজন থাকে তবে বিধাতার উপর সে ভার দিন, আপনি আর হাত দিবেন না।” রমেশ ইহার উত্তরে কহিতেছিল, "কমলা সম্বন্ধে সকল কথা নিঃশেষে পরিত্যাগ করিবার পূর্বে নলিনাক্ষের কাছে সকল ঘটনা না জানাইয়া আমার নিষ্কৃতি হইতেই পারে না। এ পৃথিবীতে কমলার কথা তুলিবার সমস্ত প্রয়োজন হয়তো শেষ হইয়া গেছে, হয়তো শেষ হয় নাই— যদি না হইয়া থাকে তবে আমার যেটুকু বক্তব্য সেটুকু সারিয়া ছুটি পাইতে চাই।” খুড়া কহিলেন, “আচ্ছা, আপনি একটুখানি বন্ধন, আমি জাসিতেছি।” ஆ রমেশ ঘুরিয়া বসিয়া জানলা হইতে শূন্তদৃষ্টিতে লোকপ্রবাহের দিকে চাহিয়া রহিল ; কিছুক্ষণ পরেই পায়ের শৰে সতর্ক হইয়া দেখিল, একটি রমণী ভূমিতে মাখা ঠেকাইয় তাহাকে প্রণাম করিল। যখন সে প্রণাম করিয়া উঠিল তখন রমেশ জার বসিয়া থাকিতে পারিল না ; তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, "কমলা!” কমল স্কন্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিল। so খুড়া কহিলেন, ‘রমেশবাবু, কমলার সমুদয় ছখকে সৌভাগ্যে পরিণত করিয়া