পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 রবীন্দ্র-রচনাবলী আর্ষে, তুমি তোমার সন্তানদিগকে সংসারের চরম ভয় হইতে উত্তীর্ণ করিয়া দাও। তুমি কখনো স্বপ্নেও জান নাই যে, তোমার আত্মবিশ্বত বীরত্ব-দ্বারা তুমি পৃথিবীর বীরপুরুষদিগকেও লজ্জিত করিতেছ। তুমি যেমন দিবাবসানে সংসারের কাজ শেষ করিয়া নিঃশব্দে পতির পালঙ্কে আরোহণ করিতে, দাম্পত্যলীলার অবসানদিনে সংসারের কার্যক্ষেত্র হইতে বিদায় লইয়া তুমি তেমনি সহজে বধুবেশে সীমস্তে মঙ্গলসিন্দুর পরিয়া পতির চিতায় আরোহণ করিয়াছ। মৃত্যুকে তুমি স্বন্দর করিয়াছ, শুভ করিয়াছ, পবিত্র করিয়াছ— চিতাকে তুমি বিবাহশয্যার ন্যায় আনন্দময় কল্যাণময় করিয়াছ। বাংলাদেশে পাবক তোমারই পবিত্র জীবনাহুতি-দ্বারা পূত হইয়াছে— আজ হইতে এই কথা আমরা স্মরণ করিব। আমাদের ইতিহাস নীরব, কিন্তু অগ্নি আমাদের ঘরে ঘরে তোমার বাণী বহন করিতেছে । তোমার অক্ষয়-অমর স্মরণনিলয় বলিয়া সেই অগ্নিকে, তোমার সেই অন্তিমবিবাহের জ্যোতিঃস্থত্রময় অনন্ত পট্টবসনখানিকে আমরা প্রত্যহ প্রণাম করিব। সেই অগ্নিশিখা তোমার উষ্ঠত বাহুরূপে আমাদের প্রত্যেককে আশীৰ্বাদ করুক। মৃত্যু যে কত সহজ, কত উজ্জল, কত উন্নত, হে চিরনীরব স্বৰ্গবাসিনী, অগ্নি আমাদের গৃহপ্রাঙ্গণে তোমার নিকট হইতে সেই বার্তা বহন করিয়া অভয় ঘোষণা করুক । কাতিক ১৩০৯ পাগল পশ্চিমের একটি ছোটো শহর। সম্মুখে বড়ো রাস্তার পরপ্রাস্তে খোড়ো চালগুলার উপরে পাচ-ছয়টা তালগাছ বোবার ইঙ্গিতের মতো আকাশে উঠিয়াছে, এবং পোড়ো বাড়ির ধারে প্রাচীন তেঁতুলগাছ তাহার লঘুচিকণ ঘন পল্লবভার সবুজ মেঘের মতো স্তপে স্তপে স্ফীত করিয়া রহিয়াছে। চালশূন্ত ভাঙা ভিটার উপরে ছাগ-ছানা চরিতেছে। পশ্চাতে মধ্যাহ-আকাশের দিগন্তরে পর্যন্ত বনশ্রেণীর শু্যামলতা । kr আজ এই শহরটির মাথার উপর হইতে বর্ষ হঠাৎ তাহার কালো অবগুণ্ঠন একেবারে অপসারিত করিয়া দিয়াছে। আমার অনেক জরুরি লেখা পড়িয়া আছে— তাহারা পড়িয়াই রহিল। জানি, তাহা ভবিষ্যতে পরিতাপের কারণ হইবে ; তা হউক, সেটুকু স্বীকার করিয়া লইতে