পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

84 o রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু শ্ৰাবাকাব্যের চেয়ে দৃশুকাব্য স্বভাবতই কতকটা পরাধীন বটে। বাহিরের সাহায্যেই নিজেকে সার্থক করিবার জন্য সে বিশেষভাবে স্বই । সে যে অভিনয়ের জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে, এ কথা তাহাকে স্বীকার করিতেই হয় । আমরা এ কথা স্বীকার করি না । সাধবী স্ত্রী যেমন স্বামীকে ছাড়া আর-কাহাকেও চায় না, ভালো কাব্য তেমনি ভাবুক ছাড়া আর-কাহারও অপেক্ষা করে না । সাহিত্য পাঠ করিবার সময় আমরা সকলেই মনে মনে অভিনয় করিয়া থাকি ; সে অভিনয়ে যে কাব্যের সৌন্দর্য থোলে না সে কাব্য কোনো কবিকে যশস্বী করে নাই । বরঞ্চ এ কথা বলিতে পার যে, অভিনয়বিদ্যা নিতান্ত পরাপ্রিতা । সে অনাথ৷ নাটকের জন্য পথ চাহিয়া বসিয়া থাকে। নাটকের গৌরব অবলম্বন করিয়াই সে আপনার গৌরব দেখাইতে পারে। স্ত্রৈণ স্বামী যেমন লোকের কাছে উপহাস পায়, নাটক তেমনি যদি অভিনয়ের অপেক্ষা করিয়া আপনাকে নানা দিকে খর্ব করে তবে সে’ও সেইরূপ উপহাসের যোগ্য হইয় উঠে । নাটকের ভাবখানা এইরূপ হওয়া উচিত যে, “আমার যদি অভিনয় হয় তো হউক, না হয় তো অভিনয়ের পোড়াকপাল— আমার কোনোই ক্ষতি নাই।’ যাহাই হউক, অভিনয়কে কাব্যের অধীনতা স্বীকার করিতেই হয়। কিন্তু তাই বলিয়া সকল কলাবিদ্যারই গোলামি তাহাকে করিতে হইবে এমন কী কথা আছে । যদি সে আপনার গৌরব রাখিতে চায় তবে যেটুকু অধীনতা তাহার আত্মপ্রকাশের জন্য নিতান্তই না হইলে নয় সেইটুকুই সে যেন গ্রহণ করে ; তাহার বেশি সে যাহা-কিছু অবলম্বন করে তাহাতে তাহার নিজের অবমাননা হয় । ইহা বলা বাহুল্য, নাট্যোক্ত কথাগুলি অভিনেতার পক্ষে নিতান্ত আবখ্যক । কবি তাহাকে যে হাসির কথাটি যোগান তাহা লইয়াই তাহাকে হাসিতে হয় ; কবি তাহাকে যে কাল্লার অবসর দেন তাহা লইয়াই কঁাদিয়া সে দশকের চোখে জল টানিয়া আনে । কিন্তু ছবিটা কেন ? তাহ অভিনেতার পশ্চাতে ঝুলিতে থাকে, অভিনেতা তাহাকে সৃষ্টি করিয়া তোলে না ; তাহা আঁকামাত্র ; আমার মতে তাহাতে অভিনেতার অক্ষমতা, কাপুরুষতা প্রকাশ পায়। এইরূপে যে উপায়ে দর্শকদের মনে বিভ্রম উৎপাদন করিয়া সে নিজের কাজকে সহজ করিয়া তোলে তাহা চিত্রকরের কাছ হইতে ভিক্ষা করিয়া আনা । তা ছাড়া, যে দর্শক তোমার অভিনয় দেখিতে আসিয়াছে তাহার কি নিজের সম্বল কানা-কড়াও নাই ? সে কি শিশু ? বিশ্বাস করিয়া তাহার উপরে কি কোনো বিষয়েই