পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, 8¢२ . রবীন্দ্র-রচনাবলী । সেখানে জাদুকরের হাতে দৃশ্যপট আপনি রচিত হইতে থাকে। সেই মঞ্চ, সেই পটই নাট্যকারের লক্ষ্যস্থল, কোনো কৃত্রিম মঞ্চ ও কৃত্রিম পট কবিকল্পনার উপযুক্ত হইতে পারে না। டி g á. অতএব, যখন দুন্যস্ত ও সারথি একই স্থানে স্থির দাড়াইয়া বর্ণনা ও অভিনয়ের দ্বারা রথবেগের আলোচনা করেন, সেখানে দর্শক এই অতি সামান্য কথাটুকু অনায়াসেই ধরিয়া লন যে, মঞ্চ ছোটাে, কিন্তু কাব্য ছোটাে নয় ; অতএব কাব্যের খাভিরে মঞ্চের এই অনিবার্য ক্রটিকে প্রসন্নচিত্তে র্তাহারা মার্জন করেন এবং নিজের চিত্তক্ষেত্রকে সেই ক্ষুদ্রায়তনের মধ্যে প্রসারিত করিয়া দিয়া মঞ্চকেই মহীয়ান করিয়া তোলেন। কিন্তু মঞ্চের খাতিরে কাব্যকে যদি খাটো হইতে হইত, তবে ওই কয়েকটা হতভাগ্য কাষ্ঠখণ্ডকে কে মাপ করিতে পারিত ? # শকুন্তলা-নাটক বাহিরের চিত্রপটের কোনো অপেক্ষ রাখে নাই বলিয়া আপনার চিত্রপটগুলিকে আপনি স্বষ্টি করিয়া লইয়াছে। তাহার কথাপ্রম, তাহার স্বর্গপথের মেঘলোক, তাহার মারীচের তপোবনের জন্য সে আর-কাহারও উপর কোনো বরাত দেয় নাই। সে নিজেকে নিজে সম্পূর্ণ করিয়া তুলিয়াছে। কি চরিত্রস্বজনে, কি স্বভাবচিত্রে, নিজের কাব্যসম্পদের উপরেই তাহার একমাত্র নির্ভর । আমরা অন্ত প্রবন্ধে বলিয়াছি, যুরোপীয়ের বাস্তব সত্য নহিলে নয়। কল্পনা যে কেবল তাহীদের চিত্তরঞ্জন করিবে তাহা নয়, কাল্পনিককে অবিকল বাস্তবিকের মতো করিয়া বালকের মতো তাহাদিগকে ভুলাইবে । কেবল কাব্যরসের প্রাণদায়িনী বিশল্যকরণীটুকু হইলে চলিবে না, তাহার সঙ্গে বাস্তবিকতার আস্ত গন্ধমাদনটা পর্যন্ত চাই। এখন কলিযুগ, সুতরাং গন্ধমাদন টানিয়া আনিতে এঞ্জিনিয়ারিং চাই— তাহার ব্যয়ও সামান্য নহে। বিলাতের স্টেজে শুদ্ধমাত্র এই খেলার জন্য যে বাজে খরচ হয়, ভারতবর্ষের কত অভ্ৰভেদী দুর্ভিক্ষ তাহার মধ্যে তলাইয়া যাইতে পারে। ● প্রাচ্যদেশের ক্রিয়াকর্ম খেলা-আনন্দ সমস্ত সরল-সহজ । কলাপাতায় আমাদের ভোজ সম্পন্ন হয় বলিয়া ভোজের যাহা প্রকৃততম আনন্দ, অর্থাৎ বিশ্বকে অবরিতভাবে নিজের ঘরটুকুর মধ্যে আমন্ত্ৰণ করিয়া আনা, সম্ভবপর হয় । আয়োজনের ভ্যর যদি জটিল ও অতিরিক্ত হইত তবে আসল জিনিসটাই মারা যাইত । বিলাতের নকলে আমরা যে থিয়েটার করিয়াছি তাহা ভারাক্রাস্ত একটা স্ফীত পদার্থ। তাহাকে নড়ানো শক্ত, তাহাকে আপামর সকলের দ্বারের কাছে আনিয়া দেওয়া দুঃসাধ্য ; তাহাতে লক্ষ্মীর পেঁচাই সরস্বতীর পদ্মকে প্রায় আচ্ছন্ন করিয়া