পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86:br রবীন্দ্র-রচনাবলী * উক্ত ভদ্রলোক তাবচ শোভতে যাবৎ তিনি উচ্চ অঙ্গের কথা বলেন, যাবৎ তিনি আবহমান কালের পরীক্ষিত সর্বজনবিদিত সত্য-ঘোষণায় প্রবৃত্ত থাকেন— কিন্তু তখনি তাহার বিপদ যখনি তিনি সহজ কথা নিজের ভাষায় বলিবার চেষ্টা করেন। যে লোক একটা বলিবার বিশেষ কথা না থাকিলে কোনো কথাই বলিতে পারে না, হয় বেদবাক্য বলে নয় চুপ করিয়া থাকে, হে চতুরানন, তাহার কুটুম্বিত, তাহার সাহচর্য, তাহার প্রতিবেশ— শিরসি মা লিখ, ম৷ লিথ, মা লিখ । পৃথিবীতে জিনিসমাত্রই প্রকাশধর্মী নয়। কয়লা আগুন না পাইলে জলে না, স্ফটিক অকারণে ঝকঝক্ করে। কয়লায় বিস্তর কল চলে, স্ফটিক হার গাথিয়া প্রিয়জনের গলায় পরাইবার জন্য। কয়লা আবশ্বক, স্ফটিক মূল্যবান। এক-একটি দুর্লভ মানুষ এইরূপ স্ফটিকের মতো অকারণ ঝলমল করিতে পারে। সে সহজেই আপনাকে প্রকাশ করিয়া থাকে, তাহার কোনো বিশেষ উপলক্ষের আবশ্যক হয় না। তাহার নিকট হইতে কোনো বিশেষ প্রয়োজন সিদ্ধ করিয়া লইবার গরজ কাহারও থাকে না ; সে অনায়াসে আপনাকে আপনি দেদীপ্যমান করে, ইহা দেখিয়াই আনন্দ । মাতুষ প্রকাশ এত ভালোবাসে, আলোক তাহার এত প্রিয় যে, আবশ্বককে বিসর্জন দিয়া, পেটের অন্ন ফেলিয়াও, উজ্জলতার জন্য লালায়িত হইয়া উঠে। এই গুণটি দেখিলে, মানুষ যে পতঙ্গশ্রেষ্ঠ সে সম্বন্ধে সন্দেহ থাকে না। উজ্জল চক্ষু দেখিয়া যে জাতি অকারণে প্রাণ দিতে পারে তাহার পরিচয় বিস্তারিত করিয়া দেওয়া বাহুল্য। কিন্তু সকলেই পতঙ্গের ডানা লইয়া জন্মায় নাই। জ্যোতির মোহ সকলের নাই । অনেকেই বুদ্ধিমান, বিবেচক । গুহা দেখিলে তাহারা গভীরতার মধ্যে তলাইতে চেষ্ট করেন, কিন্তু আলো দেখিলে উপরে উড়িবার ব্যর্থ উদ্যমমাত্রও করেন না। কাব্য দেখিলে ইহারা প্রশ্ন করেন ইহার মধ্যে লাভ করিবার বিষয় কী আছে, গল্প শুনিলে অষ্টাদশ সংহিতার সহিত মিলাইয়া ইহারা ভূয়সী গবেষণার সহিত বিশুদ্ধ ধর্মমতে দুয়ে বা বাহবা দিবার জন্য প্রস্তুত হইয়া বসেন। যাহা আকারণ, যাহা অনাবস্তক, তাহার প্রতি ইহাদের কোনো লোত নাই। যাহারা আলোক-উপাসক তাহারা এই সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করে নাই। তাহারা ইহাদিগকে যে-সকল নামে অভিহিত করিয়াছে আমরা তাহার অনুমোদন করি না। বররুচি ইহাদিগকে অরসিক বলিয়াছেন, আমাদের মতে ইহা রুচিগৰ্হিত। আমরা ইহাদিগকে যাহা মনে করি তাহা মনেই রাখিয়া দিই। কিন্তু,