পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Ebr রবীন্দ্র-রচনাবলী অজ্ঞাত নিখিলের সহিত নবীন পরিচয়, এই হইল পূর্বমেঘ। নবমেঘের আর-একটি কাজ আছে। সে আমাদের চারি দিকে একটি পরমনিভৃত পরিবেষ্টন রচনা করিয়া ‘জননান্তরসৌহৃদানি’ মনে করাইয়া দেয়, অপরূপ সৌন্দর্যলোকের মধ্যে কোনোএকটি চিরজ্ঞাত চিরপ্রিয়ের জন্ত মনকে উতলা করিয়া তোলে । পূর্বমেঘে বহুবিচিত্রের সহিত সৌন্দর্যের পরিচয় এবং উত্তরমেঘে সেই একের সহিত আনন্দের সম্মিলন। পৃথিবীতে বহুর মধ্য দিয়া সেই মুখের যাত্রা, এবং স্বৰ্গলোকে একের মধ্যে সেই অভিসারের পরিণাম । নববর্ষার দিনে এই বিষয়কর্মের ক্ষুদ্র সংসারকে কে না বলিবে নির্বাসন । প্রভুর অভিশাপেই এখানে আটকা পড়িয়া আছি । মেঘ আসিয়া বাহিরে যাত্রা করিবার জন্ত আহবান করে, তাহাই পূর্বমেঘের গান ; এবং যাত্রার অবসানে চিরমিলনের জন্য আশ্বাস দেয়, তাহাই উত্তরমেঘের সংবাদ । সকল কবির কাব্যেরই গৃঢ় অভ্যস্তরে এই পূর্বমেঘ ও উত্তরমেঘ আছে। সকল বড়ো কাব্যই আমাদিগকে বৃহতের মধ্যে আহবান করিয়া আনে ও নিভৃতের দিকে নির্দেশ করে। প্রথমে বন্ধন ছেদন করিয়া বাহির করে, পরে একটি ভূমার সহিত বাধিয়া দেয়। প্রভাতে পথে লইয়া আসে, সন্ধ্যায় ঘরে লইয়া যায়। একবার তানের মধ্যে আকাশপাতাল ঘুরাইয়া সমের মধ্যে পূর্ণ আনন্দে দাড় করাইয়া দেয়। যে কবির তান আছে, কিন্তু কোথাও সম নাই— যাহার মধ্যে কেবল উদ্যম আছে, আশ্বাস নাই, তাহার কবিত্ব উচ্চকাব্যশ্রেণীতে স্থায়ী হইতে পারে না । শেষের দিকে "একটা কোথাও পৌছাইয়া দিতে হইবে, এই ভরসাতেই আমরা আমাদের চিরাভ্যস্ত সংসারের বাহির হইয়। কবির সহিত যাত্রা করি ; পুম্পিত পথের মধ্য দিয়া আনিয়া হঠাৎ একটা শূন্তগহবরের ধারের কাছে ছাড়িয়া দিলে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়। এই জন্য কোনো কবির কাব্য পড়িবার সময় আমরা এই দুটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি, তাহার পূর্বমেঘ আমাদিগকে কোথায় বাহির করে এবং উত্তরমেঘ কোন সিংহদ্বারের সম্মুখে আনিয়া উপনীত করে । শ্রাবণ ১৩০৮