পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१२ রবীন্দ্র-রচনাবলী অনুভব করে। এইজন্য মানুষের নিন্দ শুনিলেই মনে হয় তাহার প্রকৃত পরিচয় পাওয়া গেল। পৃথিবীতে অতি অল্প লোকের সঙ্গেই আমাকে ঘরকন্না করিতে হয়, অথচ এত শত লোকের প্রকৃত পরিচয় লইয়া আমার লাভটা কী ? কিন্তু প্রকৃত পরিচয়ের জন্য ব্যগ্রতা মাতুষের স্বভাবসিদ্ধ ধর্ম, সেটা মনুষ্যত্বের প্রধান অঙ্গ, অতএব তাহার সঙ্গে বিবাদ করা চলে না ; কেবল যখন দুঃখ করিবার দীর্ঘ অবকাশ পাওয়া যায় তখন এই ভাবি যে, যাহা সুন্দর, যাহা সম্পূর্ণ, যাহা ফুলের মতো বাহিরে বিকশিত হইয়া দেখা দেয়, তাহ বাহিরে আসে বলিয়াই বুদ্ধিমান মাহুষ ঠকিবার ভয়ে তাহাকে বিশ্বাস করিয়া তাহাতে সম্পূর্ণ আনন্দ ভোগ করিতে সাহস করে না। ঠকাই কি সংসারে চরম ঠকা । না ঠকাই কি চরম লাভ । কিন্তু এ-সকল বিষয়ের ভার আমার উপরে নাই, মচুন্যচরিত্র আমি জন্মিবার বহুপূর্বেই তৈরি হইয়া গেছে । কেবল এই কথাটা আমি বুঝিবার ও বুঝাইবার চেষ্টায় ছিলাম যে, সাধারণত মানুষ নিন্দা করিয়া যে সুখ পায় তাহা বিদ্বেষের সুখ নহে । বিদ্বেষ কখনোই সাধারণভাবে সুখকর হইতে পারে না এবং বিদ্বেষ সমস্ত সমাজের স্তরে স্তরে পরিব্যাপ্ত হইলে সে বিষ হজম করা সমাজের অসাধ্য । আমরা বিস্তর ভালো লোক, নিরীহ লোককেও নিন্দা করিতে শুনিয়াছি ; তাহার কারণ এমন নহে ষে সংসারে ভালো লোক, নিরীহ লোক নাই— তাহার কারণ এই যে, সাধারণত নিন্দার মূল প্রশ্ৰবণটা মন্দভাব নয়। কিন্তু বিদ্বেষমূলক নিন্দ সংসারে একেবারে নাই, এ কথা লিখিতে গেলে সত্যযুগের জন্য অপেক্ষা করিতে হয় । তবে সে নিন্দ সম্বন্ধে অধিক কথা বলিবার নাই । কেবল প্রার্থনা এই যে, এরূপ নিন্দ যাহার স্বভাবসিদ্ধ সেই দুর্ভাগাকে যেন দয়া করিতে পারি । অগ্রহায়ণ ১৩০৯ বসন্তযাপন এই মাঠের পারে শালবনের নূতন কচি পাতার মধ্য দিয়া বসন্তের হাওয়া দিয়াছে । অভিব্যক্তির ইতিহাসে মানুষের একটা অংশ তো গাছপালার সঙ্গে জড়ানো আছে। কোনো এক সময়ে আমরা যে শাখাযুগ ছিলাম, আমাদের প্রকৃতিতে তাহার