পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র প্রবন্ধ 影 8Գֆ পথপ্রান্তে আমি পথের ধারে বসিয়া লিখি, তাই কী লিখি ভাবিয়া পাই না । ছায়াময় পথ। প্রাস্তে আমার ক্ষুদ্র গৃহ। তাহার বাতায়ন উন্মুক্ত। ভোরের বেলায় স্থধের প্রথম কিরণ অশোকশাখার কম্পমান ছায়ার সঙ্গে আমার সম্মুখে আসিয়া দাড়ায়, আমাকে দেখে, আমার কোলের উপর পড়িয়া খেলা করে, অামার লেখার উপর আসিয়া পড়ে এবং যখন চলিয়া যায় তখন লেখার উপরে খানিকটা সোনালি রঙ রাখিয়া দিয়া যায় ; আমার লেখার উপরে তাহার কনকচুম্বনের চিহ্ন থাকিয়া যায়। আমার লেখার চারি ধারে প্রভাত ফুটিয়া উঠে। মাঠের ফুল, মেঘের রঙ, ভোরের বাতাস এবং একটুখানি ঘুমের ঘোর আমার পাতার মধ্যে মিশাইয়া থাকে, অরুণের প্রেম আমার অক্ষরগুলির চারি দিকে লতাইয়া উঠে । আমার সমুখ দিয়া কত লোক আসে কত লোক যায়। প্রভাতের আলো তাহাদের আশীৰ্বাদ করিতেছে, স্নেহভরে বলিতেছে তোমাদের যাত্রা শুভ হউক’ ; পাখিরা কল্যাণগান করিতেছে, পথের আশেপাশে ফুটো-ফুটে ফুলের আশার মতো ফুটিয়া উঠিতেছে। যাত্রা-আরম্ভের সময়ে সকলে বলিতেছে, ভয় নাই, ভয় নাই।’ প্রভাতে সমস্ত বিশ্বজগং শুভযাত্রার গান গাহিতেছে । অনন্ত নীলিমার উপর দিয়া সূর্যের জ্যোতির্ময় রথ ছুটিয়াছে। নিখিল চরাচর যেন এইমাত্র বিশ্বেশ্বরের জয়ধ্বনি করিয়া বাহির হইল । সহাস্ত প্রভাত আকাশে বাহুবিস্তার করিয়া আছে, অনন্তের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া জগৎকে পথ দেখাইয়া দিতেছে। প্রভাত, জগতের আশা, আশ্বাস, প্রতিদিবসের নান্দী। প্রতিদিন সে পূর্বের কনকদ্বার উদ্‌ঘাটন করিয়া জগতে স্বৰ্গ হইতে মঙ্গলবার্তা আনিয়া দেয়, সমস্ত দিনের মতো অমৃত আহরণ করিয়া আনে, তাহার সঙ্গে সঙ্গে নন্দনের পারিজাতের গন্ধ আসিয়া পৃথিবীর ফুলের গন্ধ জাগাইয়া তোলে। প্রভাত জগতের যাত্রা-আরম্ভের আশীৰ্বাদ ; সে আশীর্বাদ মিথ্যা নহে । অামার লেখার উপরে ছায়া ফেলিয়া পৃথিবীর লোক পথ দিয়া চলিয়া যাইতেছে তাহারা সঙ্গে কিছুই লইয়া যায় না। তাহারা স্থখ-দুঃখ ভুলিতে ভুলিতে চলিয়া যায়। জীবন হইতে প্রতি নিমেষের ভার ফেলিতে ফেলিতে চলিয়া যায়। তাহদের হাসিকান্না আমার লেখার উপরে পড়িয়া অঙ্কুরিত হইয় উঠে। তাহদের গান তাহার ভুলিয়া যায়, তাহদের প্রেম তাহার রাখিয়া যায়। জার-কিছুই থাকে না, কিন্তু প্রেম তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকে। তাহারা সমস্ত পথ