পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র প্রবন্ধ gلاصا প্রতি পদক্ষেপেই তাহাজের তৃপ্তি। এই পথ ভালোবাসে বলিয়াই তাহারা চলে, আবার এই পথ ভালোবাসে বলিয়াই তাহারা চলিতে চাহে না । তাহারা পা উঠাইতে চাহে না । প্রতি পদে তাহদের ভ্রম হয় যেমন পাইয়াছি এমন আর পাইব না’, কিন্তু অগ্রসর হইয়াই আবার সমস্ত ভুলিয়া যায়। প্রতিপদে তাহারা শোক মুছিয়া মুছিয়া চলে। তাহারা আগেভাগে আশঙ্কা করিয়া বসে বলিয়াই কঁাদে, নহিলে কঁদিবার কোনো কারণ নাই । ওই দেখো, কচি ছেলেটিকে বুকে করিয়া মা সংসারের পথে চলিয়াছে। ওই ছেলেটির উপরে মাকে কে বাধিয়াছে। ওই ছেলেটিকে দিয়া মাকে কে টানিয়া লইয়া যাইতেছে। প্রেমের প্রভাবে পথের কাটা মায়ের পায়ের তলে কেমন ফুল হইয়া উঠিতেছে। ছেলেটিকে মায়ের কোলে দিয়া পথকে গৃহের মতে মধুর করিয়াছে কে ? কিন্তু হায়, মা ভুল বোঝে কেন ? মা কেন মনে করে এই ছেলেটির মধ্যেই তাহার অনন্তের অবসান ? অনন্তের পথে যেখানে পৃথিবীর সকল ছেলে মিলিয়া খেলা করে, একটি ছেলে মায়ের হাত ধরিয়া মাকে সেই ছেলের রাজ্যে লইয়া যায়— সেখানে শতকোটি সস্তান। সেখানে বিশ্বের কচি মুখগুলি ফুটিয়া একেবারে নন্দনবন করিয়া রাথিয়াছে । আকাশের চাদকে কাড়াকড়ি করিয়া লইবার জন্য আগ্রহ । সেখানে স্বলিত মধুর ভাষার কল্লোল। আবার ও দিকে শোনো— স্বকুমার অসহায়েরা কী কান্নাই কঁদিতেছে। শিশুদেহে রোগ প্রবেশ করিয়া ফুলের পাপড়ির মতো কোমল ততুগুলি জীর্ণ করিয়া ফেলিতেছে । কোমল কণ্ঠ হইতে স্বর বাহির হইতেছে না ; ক্ষীণস্বরে কাদিতে চেষ্টা করিতেছে, কান্না কণ্ঠের মধ্যেই মিলাইয়া যাইতেছে । আর, ওই শিশুদের প্রতি বর্বর বয়স্কদের কত অত্যাচার ! একটি ছেলে আসিয়া মাকে পৃথিবীর সকল ছেলের মা করিয়া দেয়। যার ছেলে নাই তার কাছে অনন্ত স্বর্গের একটা দ্বার রুদ্ধ, ছেলেটি আসিয়া স্বর্গের সেই দ্বারটি খুলিয়া দেয় ; তার পর তুমি চলিয়া ষাও, সেও চলিয়া যাক। তার কাজ ফুরাইল, তার অন্ত কাজ আছে । % প্রেম আমাদিগকে ভিতর হইতে বাহিরে লইয়া যায়, আপন হইতে অন্তের দিকে লইয়া যায়, এক হইতে আর-একের দিকে অগ্রসর করিয়া দেয়। এই জন্তই তাহাকে পথের আলো বলি ; সে যদি আলেয়ার আলো হইত তবে সে পথ ভুলাইয়া ঘাড় ভাঙিয়া তোমাকে স্বা-হোক একটা-কিছুর মধ্যে ফেলিয়া দিত, আর-সমস্ত রুদ্ধ করিয়া দিত, সেই একটা-কিছুর মধ্যে পড়িয়াই তোমার অনন্তযাত্রার অবসান হইত— আন্ত পথিকেরা তোমাকে মৃত বলিয়া চলিয়া যাইত। কিন্তু এখন সেটি হইবার জো নাই ।