পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bペ রবীন্দ্র-রচনাবলী একটিকে ভালোবাসিলেই আর-একটিকে ভালোবাসিতে শিখিবে ; অর্থাৎ এককে অতিক্রম করিবার উদ্দেশেই একের দিকে ধাবমান হইতে হইবে । পথ দেখাইবার জন্যই সকলে আসিয়াছে, পথের বাধা হইবার জন্য কেহ আসে নাই । এইজন্য কেহই ভিড় করিয়া তোমাকে ঘিরিয়া থাকে না, সকলেই সরিয়া গিয়া তোমাকে পথ করিয়া দেয়, সকলেই একে একে চলিয়া যায়। কেহই আপনাকে বা আর-কাহাকেও বদ্ধ করিয়া রাখিতে পারে না । ইচ্ছা করিয়া যে ব্যক্তি নিজের চারি দিকে দেয়াল গাথিয়া তোলে, কালের প্রবাহ ক্রমাগত আঘাত করিয়া তাহার সে দেয়াল এক দিন ভাঙিয়া দেয়, তাহাকে পথের মধ্যে বাহির করিয়া দেয় । তখন সে আবরণের অভাবে হি হি করিয়া কঁাপিতে থাকে, হায় হায় করিয়৷ কাদিয়া মরে । জগৎকে দ্বিধা হইতে বলে। ধূলির মধ্যে আচ্ছন্ন হইবার জন্য প্রাণপণ চেষ্ট করে । আমরা তো পথিক হইয়াই জন্মিয়াছি, অনন্ত শক্তিমান যদি এই অনন্ত পথের উপর দিয়া আমাদিগকে কেবলমাত্র বলপূর্বক লইয়া যাইতেন, প্রচণ্ড অদৃষ্ট যদি আমাদের চুলের মুঠি ধরিয়া হিড় হিড়, করিয়া টানিয়া লইয়া যাইত, তবে আমরা দুর্বলের কী করিতে পারিতাম। কিন্তু যাত্রার আরম্ভে শাসনের বজধ্বনি শুনিতেছি না, প্রভাতের আশ্বাসবাণী শুনিতেছি । পথের মধ্যে কষ্ট আছে, দুঃখ আছে বটে, কিন্তু তবু আমরা ভালোবাসিয়া চলিতেছি । সকল সময়ে আমরা গ্রাহ করি না বটে, কিন্তু ভালোবাসা সহস্র দিক হইতে তাহার বাহু বাড়াইয়া আছে। সেই অবিশ্রাম ভালোবাসার আহবানই আমরা যেন শিরোধার্য করিয়া চলিতে শিখি, মোহে দেখিতেছি, ভাবিতেছি, ভালোবাসিতেছি। আমি পথিকদিগকে বলিতেছি, ‘তোমাদের যাত্রা শুভ হউক । আমি আমার প্রেম তোমাদিগকে পাথেয় স্বরূপে দিতেছি । কারণ, পথ চলিতে আর-কিছুর আবগুক নাই, কেবল প্রেমের আবশ্যক। সকলে যেন সকলকে সেই প্রেম দেয়। পথিক ৰেন পথিককে পথ চলিতে সাহায্য করে | অগ্রহায়ণ ১২৯২