বিচিত্র প্রবন্ধ 8»ጳ আমাদের জাহাজ লৌহশূঙ্খল গলায় বাধিয়া খাড়া দাড়াইয়া রহিল। স্রোতস্বিনী খরপ্রবাহে ভালিয়া চলিয়াছে। কখনো তরঙ্গসংকুল, কখনো শাস্ত, কোথাও সংকীর্ণ, কোথাও প্রশস্ত, কোথাও ভাঙন ধরিয়াছে, কোথাও চড়া পড়িয়াছে। এক-এক জায়গায় কুলকিনারা দেখা যায় না। আমাদের সম্মুখে পরপর মেঘের রেখার মতো দেখা যাইতেছে। চারি দিকে জেলেডিঙি ও পাল-তোলা নৌকা। বড়ো বড়ো জাহাজ প্রাচীন পৃথিবীর বৃহদাকার সরীস্থপ জলজন্তুর মতে ভাসিয়া চলিয়াছে। এখন বেলা পড়িয়া আসিয়াছে। মেয়েরা গঙ্গার জলে গা ধুইতে আসিয়াছে, রোদ পড়িয়া আসিতেছে। বঁাশবন, খেজুরবন, আমবাগান ও ঝোপঝাপের ভিতরে ভিতরে একএকটি গ্রাম দেখা যাইতেছে। ডাঙায় একটা বাছুর আড়ি করিয়া গ্ৰীবা ও লাঙ্গুল নানা ভঙ্গীতে আস্ফালনপূর্বক একটি বড়ো স্ট্রীমারের সঙ্গে সঙ্গে ছুটিয়াছে। গুটিকতক মানবসস্তান ডাঙায় দাড়াইয়া হাততালি দিতেছেন ; ষে চর্মখানি পরিয়া পৃথিবীতে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন তাহার বেশি পোশাক পরা আবশুক বিবে না করেন নাই। ক্রমে অন্ধকার হইয়া আসিল । তীরের কুটিরে আলো জলিল । সমস্ত দিনের জাগ্রত আলস্ত সমাপ্ত করিয়া রাত্রের নিদ্রায় শরীর-মন সমর্পণ করিলাম । শ্রাবণ, ভাদ্র, অগ্রহায়ণ ১২৯১