পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মেঘদূত

 রামগিরি হইতে হিমালয় পর্যন্ত প্রাচীন ভারতবর্ষের ষে দীর্ঘ এক খণ্ডের মধ্য দিয়া মেঘদূতের মন্দাক্রান্ত ছন্দে জীবনস্রোত প্রবাহিত হইয়া গিয়াছে, সেখান হইতে কেবল বর্ষাকাল নহে, চিরকালের মতো আমরা নির্বাসিত হইয়াছি। সেই যেখানকার উপবনে কেতকীর বেড়া ছিল, এবং বর্ষার প্রাক্কালে গ্রামচৈত্যে গৃহবলিভুক্‌ পাখির নীড় আরম্ভ করিতে মহাব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিল, এবং গ্রামের প্রাস্তে জম্বুবনে ফল পাকিয়া মেঘের মতো কালো হইয়াছিল, সেই দশার্ণ কোথায় গেল। আর, সেই-বে অবস্তীতে গ্রামবুদ্ধের উদয়ন এবং বাসবদত্তার গল্প বলিত তাহারাই বা কোথায়। আর, সেই সিপ্রাতটবর্তনী উজ্জয়িনী। অবশু তাহার বিপুল ত্র, বহুল ঐশ্বৰ্ধ ছিল, কিন্তু তাহার বিস্তারিত বিবরণে আমাদের স্মৃতি ভারাক্রান্ত নহে— আমার কেবল সেই-বে হর্ম্যবাতায়ন হইতে পুরবধুদিগের কেশসংস্কারধূপ উড়িয়া আসিতেছিল তাহারই একটু গন্ধ পাইতেছি, এবং অন্ধকার রাত্রে যখন ভবনশিখরের উপর পারাবতগুলি ঘুমাইয়া থাকিত তখন বিশাল জনপূর্ণ নগরীর পরিত্যক্ত পথ এবং প্রকাও স্বযুপ্তি মনের মধ্যে অনুভব করিতেছি, এবং সেই রুদ্ধদ্বার স্বপ্তসৌধ রাজধানীর নির্জন পথের অন্ধকার দিয়া কম্পিতহদয়ে ব্যাকুলচরণক্ষেপে যে অভিসারিণী চলিয়াছে, তাহারই একটুখানি ছায়ার মতো দেখিতেছি, এবং ইচ্ছা করিতেছে তাহার পায়ের কাছে নিকষে কনকরেখার মতো যদি অমনি একটুখানি আলো করিতে পারা যায়।

 আবার সেই প্রাচীন ভারতখওটুকুর নদী-গিরি-নগরীর নামগুলিই বা কী শুন্দর। অবস্তী বিদিশা উজ্জয়িনী, বিন্ধ্য কৈলাস দেবগিরি, রেব। সিপ্র। ৰেজৰতী । নামগুলির মধ্যে একটি শোভা সন্ত্রম শুভ্রতা আছে । সময় যেন তখনকার পর হইতে ক্রমে ক্রমে ইতর হইয়া আসিয়াছে, তাহার ভাষা ব্যবহার মনোবৃত্তির যেন জীর্ণতা এবং অপভ্রংশত ঘটিয়াছে। এখনকার নামকরণও সেই অনুযায়ী । মনে হয়, ঐ রেব-সিপ্রা-নির্বিন্ধ্যা নদীর তীরে অবতী-বিদিশার মধ্যে প্রবেশ করিবার কোনো পথ যদি থাকিত তবে এখনকার চারি দিকের ইতর কলকাকলি হইতে পরিত্রার্ণ পাওয়া যাইত। ; অতএব, বক্ষের যে মেঘ নগনীনগরীর উপর দিয়া উড়িয়া চলিয়াছে, পাঠকের বিরহকাতরতার দীর্ঘনিশ্বাস তাহার সহচর হইয়াছে। সেই কবির ভারতবর্ষ, যেখানকার জনপদবদিগের প্রতিক্ষিলোচন জৰিকার শিখে নাই এবং পুরবস্তুদিগের