পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন সাহিত্য . دده বৃহৎ বৈরাগ্য স্থির অনিমেষভাবে রহিয়াছে। মহাভারতে কর্মেই কর্মের চরম প্রাপ্তি, নহে। তাহার সমস্ত শৌর্ষবীর্ষ, রাগম্বেৰ, হিংসা-প্রতিহিংসা, প্রয়াস ও সিদ্ধির মাঝখানে স্মশান হইতে মহাপ্রস্থানের ভৈরবসংগীত ৰাজিয়া উঠিতেছে। রামায়ণেও তাঁহাই ; পরিপূর্ণ আয়োজন ব্যর্থ হইয়া যায়, করায়ত্ত সিদ্ধি খলিত হইয় পড়ে— সকলেরই পরিণামে পরিত্যাগ। অথচ এই ত্যাগে দুঃখে নিফলতাতেই কর্মের মহত্ব ও পৌরুষের প্রভাব রজতগিরির তার উজ্জল অভ্রতেী হইয়া উঠিয়াছে। o সেইরূপ কালিদাসের সৌন্দর্বচাঞ্চল্যের মাঝখানে ভোগবৈরাগ্য স্তন্ধ হইয়া আছে। মহাভারতকে যেমন একই কালে কর্ম ও বৈরাগ্যের কাব্য বলা যায় তেমনি কালিদাসকেও একই কালে সৌন্দর্যভোগের এবং ভোগবিরতির কবি বলা যাইতে পারে। র্তাহার কাব্য সৌন্দর্যবিলাসেই শেষ হইয়া যায় না ; তাহাকে অতিক্রম করিয়া তবে কবি ক্ষান্ত হইয়াছেন । কালিদাস কোথায় থামিয়াছেন এবং কোথায় থামেন নাই, সেইটে এখনকার আদর্শের সহিত তুলনা করিয়া আলোচনা করিবার বিষয়। পথের কোনো-একটা অংশে থামিয়া তাহাকে বিচার করা যায় না, তাহার গম্যস্থান কোথায় তাহ দেখিতে হইবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ধীবরের হাত হইতে আংটি পাইয়া যেখানে দুষ্মন্ত আপনার ভ্রম বুঝিতে পারিয়াছেন, সেইখানে ব্যর্থ পরিতাপের মধ্যে যুরোপীয় কবি শকুন্তল৷ নাটকের ধবনিক ফেলিতেন। শেষ অঙ্কে স্বৰ্গ হইতে ফিরিবার পথে দৈবক্রমে দুষ্মস্তের সহিত শকুন্তলার যে মিলন হইয়াছে তাহা স্কুরোপের নাট্যরীতি-অনুসারে অবগুঘটনীয় নহে। কারণ, শকুন্তলা নাটকের আরম্ভে ষে বীজবপন হইয়াছে এই বিচ্ছেদই তাহার চরম ফল । তাহার পরেও দুষ্মন্ত-শকুন্তলার পুনর্মিলন বাহ উপায়ে দৈবামুগ্রহে ঘটাইয়া তুলিতে হইয়াছে। নাটকের অন্তর্গত কোনো ঘটনাস্থত্রে, দুষ্মন্ত-শকুন্তলার কোনো ব্যবহারে, এ মিলন ঘটিবার কোনো পথ ছিল না । তেমনি, এখনকার কবি কুমারসম্ভবে হতমনোরথ পার্বতীর দুঃখ ও লজ্জার মধ্যে কাব্য শেষ করিতেন। অকালবসন্তে রক্তবর্ণ অশোককুঞ্জে মদনমথনের দীপ্ত দেবরোযাগ্নিচ্ছটায় নতমূখী লজ্জারুণ গিরিরাজকন্ত। তাহার সমস্ত ব্যর্থ পুষ্পাভরণ বহিয়া পাঠকের ব্যথিত হৃদয়ের করুণ রক্তপদ্মের উপর আসিয়া দাড়াইতেন, অকৃতাৰ্থ প্রেমের বেদন তাহাকে চিরকালের জন্ত ঘেরিয়া থাকিত। এখনকার সমালোচকের মতে এইখানেই কাব্যের উজ্জ্বলতম স্বৰ্ধান্ত, তাহার পরে বিবাহের রাত্রি অত্যন্ত বর্ণচ্ছটা