পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন সাহিত্য &et প্রেমালাপ আছে, তাহ অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, তাহার অধিকাংশই আতাসে ইঙ্গিতে ব্যক্ত হইয়াছে, কালিদাস কোথাও রাশ আলগা করিয়া নে নাই। অন্ত কৰুি যেখানে লেখনীকে দৌড় দিবার অবসর অন্বেষণ করিত তিনি সেখানেই তাহাকে হঠাৎ নিরস্ত করিয়াছেন। দুষ্মন্ত তপোবন হইতে রাজধানীতে ফিরিয়া গিয়া শকুস্কলার কোনো খোজ লইতেছেন না। এই উপলক্ষে বিলাপ-পরিতাপের কথা অনেক হইতে পারিত, তৰু শকুন্তলার মুখে কবি একটি কথাও দেন নাই। কেবল দুর্বাসার প্রতি আতিথ্যে অনবধান লক্ষ্য করিয়া হতভাগিনীর অবস্থা আমরা যথাসম্ভব কল্পনা করিতে পারি। শকুন্তলার প্রতি কম্বের একান্ত স্নেহ বিদায়কালে কী সকরুণ গাষ্ঠীর্ষ ও সংযমের সহিত কত অল্প কথাতেই ব্যক্ত হইয়াছে। অনস্বয়া-প্রিয়ংবদার সর্থীবিচ্ছেদবেদন ক্ষণে ক্ষণে দুটি-একটি কথায় যেন বঁাধ লঙ্ঘন করিবার চেষ্টা করিয়া তখনি আবার অস্তরের মধ্যে নিরন্ত হইয়া যাইতেছে। প্রত্যাখ্যানদৃশ্যে ভয় লজ্জা, অভিমান, অহনয়, ভংসন,বিলাপ, সমস্তই আছে, অথচ কত অল্পের মধ্যে। যে শকুন্তলা মুখের সময় সরল অসংশয়ে আপনাকে বিসর্জন দিয়াছিল, দুঃখের সময় দারুণ অপমানকালে সে যে আপন হৃদয়বৃত্তির অপ্ৰগলভ মর্যাদা এমন আশ্চর্য সংযমের সহিত রক্ষা করিবে, এ কে মনে করিয়াছিল ? এই প্রত্যাখ্যানের পরবর্তী নীরবতা কী ব্যাপক, কী গভীর। কম্ব নীরব, অনস্বয়া-প্রিয়ংবদা নীরব, মালিনীতীরতপোবন নীরব, সর্বাপেক্ষা নীরব শকুন্তলা । হৃদয়বৃত্তিকে আলোড়ন করিয়া তুলিবার এমন অবসর কি আর-কোনো নাটকে এমন নিঃশব্দে উপেক্ষিত হইয়াছে ? দুষ্মস্তের অপরাধকে দুর্বাসার শাপের আচ্ছাদনে আপ্লুত করিয়া রাখা, সেও কবির সংযম। দুষ্টপ্রবৃত্তির দুরন্তপনাকে অবারিতভাবে উচ্ছম্বলভাবে দেখাইবার যে প্রলোভন তাহাও কবি সংবরণ করিয়াছেন। তাহার কাব্যলক্ষী তাহাকে নিষেধ করিয়া বলিয়াছেন— ন খলু ন খলু বাণ: সন্নিপাত্যেহেয়মস্মিন মৃদুনি মৃগশরীরে পুষ্পরাশাবিবাগ্নিঃ । দুষ্মন্ত যখন কাব্যের মধ্যে বিপুল বিক্ষোভের কারণ লইয়া মত্ত হইয়া প্রবেশ করিলেন তখন কবির অন্তরের মধ্যে এই ধ্বনি উঠিল— মূর্তে বিয়স্তপস ইব নো ভিন্নসারঙ্গযুখে৷ ধর্মীরণ্যং প্রবিশতি গজ: স্তন্দনালোকতীতঃ । তপস্তার মূর্তিমান বিয়ের ন্যায় গজরাজ ধর্মারণ্যে প্রবেশ করিয়াছে। এইবার বুঝি কাব্যের শান্তিভদ হয়। কালিদাস তখনই ধর্মারশোর,কাবাকাননের,এই মূর্তিমান বিয়কে শাপের বন্ধনে সংযত করিলেন ; ইহাকে দিয় তাহার পদ্মবনের পঙ্ক আলোড়িত