পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন সাহিত্য 6:8% অগ্রসর করিয়া দেওয়া অত্যাবগুক সেখানেও ভাষার প্রলোভন সম্বরণ করা দুঃসাধ্য হয় এবং বাক্য বিষয়কে প্রকাশিত না করিয়া পদে পদে আচ্ছন্ন করিয়া দাড়ায় ; বিষয়ের অপেক্ষ বাক্যই অধিক বাহাদুরি লইতে চেষ্টা করে এবং তাহাতে সফলও হয়। ময়ূরপুচ্ছনির্মিত এমন অনেক সুন্দর ব্যজন আছে বাহাতে ভালো বাতাস হয় না, কিন্তু বাতাস করিবার উপলক্ষমাত্র লইয়া রাজসভায় কেবল তাহ শোভার জন্ত সঞ্চালন করা হয়। রাজসভায় সংস্কৃত কাব্যগুলিও ঘটনাবিস্তাসের জন্ত তত অধিক ব্যগ্র হয় না ; তাহার বাগবিস্তার, উপমাকৌশল, বর্ণনানৈপুণ্য রাজসভাকে প্রত্যেক পদক্ষেপে চমৎকৃত করিতে থাকে। সংস্কৃতসাহিত্যে গন্তে ষে দুই-তিনখানি উপন্যাস আছে তাহার মধ্যে কাদম্বরী সর্বাপেক্ষা প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছে। যেমন রমণীর তেমনি পদ্যেরও অলংকারের প্রতি টান বেশি, গষ্ঠের সাজসজ্জা স্বভাবতই কর্মক্ষেত্রের উপযোগী । তাহাকে তর্ক করিতে হয়, অনুসন্ধান করিতে হয়, ইতিহাস বলিতে হয়, তাহাকে বিচিত্র ব্যবহারের জন্ত প্রস্তুত থাকিতে হয়— এইজন্য তাহার বেশভূষা লঘু, তাহার হস্তপদ্ধ অনাবৃত। দুর্ভাগ্যক্রমে সংস্কৃত গদ্য সর্বদা ব্যবহারের জন্য নিযুক্ত ছিল না, সেইজন্ত বাস্থশোভার বাহুল্য তাহার অল্প নহে। মেদস্ফীত বিলাসীর স্তায় তাহার সমাসবহুল বিপুলায়তন দেখিয়া সহজেই বোধ হয় সর্বদা চলা-ফেরার জন্ত সে হয় নাই ; বড়ো বড়ো টীকাকার ভাষ্যকার পণ্ডিত বাহকগণ তাহাকে কাধে করিয়া না চলিলে তাহার চলা অসাধ্য। অচল হউক, কিন্তু কিরীটে কুণ্ডলে কঙ্কণে কণ্ঠমালায় সে রাজার মতো বিরাজ করিতে থাকে। সেইজন্ত বাণভট্ট ঘদিচ স্পষ্টত গল্প করিতে বসিয়াছেন, তথাপি ভাষার বিপুল গৌরব লাঘব করিয়া কোথাও গল্পকে দৌড় করান নাই ; সংস্কৃত ভাষাকে অনুচরপরিবৃত সম্রাটের মতো অগ্রসর করিয়া দিয়া গল্পটি তাহার পশ্চাতে প্রচ্ছন্নপ্রায়ভাবে ছত্র বহন করিয়া চলিয়াছে মাত্র। ভাষার রাজমর্যাদা বৃদ্ধির জন্ত গল্পটির • কিঞ্চিৎ প্রয়োজন আছে বলিয়াই সে আছে, কিন্তু তাহার প্রতি কাহারও দৃষ্টি নাই। শূত্রক রাজা কাদম্বরী গল্পের নায়ক নহেন, তিনি গল্প শুনিতেছেন মাত্র, অতএৰু তাহার পরিচয় সংক্ষিপ্ত হইলে কোনো ক্ষতি ছিল না। আখ্যায়িকার বহিরংশ যদি যথোপযুক্ত হ্রস্ব না হয় তবে মূল আখ্যানের পরিমাণসামগ্ৰস্ত নষ্ট হয়। আমাদের দৃষ্টিশক্তির স্থায় আমাদের কল্পনাশক্তিও সীমাবদ্ধ ; আমরা কোনো জিনিসের সন্তটা একসঙ্গে সমান করিয়া দেখিতে পাই না—সস্থটা বড়ো দেখি, পশ্চাংটা ছোটাে দেখি, পৃষ্ঠদেশটা দেখি না, অম্বুমান করিয়া লই– এইজন্ত শিল্পী তাহার সাহিত্যশিল্পের