পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা । QoS সুদৰ্শনা। হয়েছে হয়েছে, আর না । তোমাদের এই গান শুনে চোখে জল ভরে আসছে । আমার মনে হচ্ছে, যা পাবার জিনিস তাকে হাতে পাবার জো নেই ; তাকে হাতে পাবার দরকার নেই। এমনি করে খোজার মধ্যেই সমস্ত পাওয়া যেন সুধাময় হয়ে আছে। কোন মাধুর্যের সন্ন্যাসী তোমাদের এই গান শিখিয়ে দিয়েছে গো— ইচ্ছে করছে, চোখে-দেখা কানে-শোনা ঘুচিয়ে দিই, হৃদয়ের ভিতরটাতে যে গহন পথের কুঞ্জবন আছে সেইখানকার ছায়ার মধ্যে উদাস হয়ে চলে যাই। ওগো কুমার তাপসগণ, তোমাদের আমি কী দেব বলো ! আমার গলায় এ কেবল রত্বের মালা, এ কঠিন হার তোমাদের কণ্ঠে পীড়া দেবে- তোমরা যে ফুলের মালা পরেছ ওর মতো কিছুই আমার কাছে নেই। [প্ৰণাম করিয়া বালকগণের প্রস্থান রোহিণীর প্রবেশ সুদৰ্শনা । ভালো করি নি, ভালো করি নি রোহিণী । তোর কাছে সমস্ত বিবরণ শুনতে আমার লজ্জা করছে। এইমাত্র হঠাৎ বুঝতে পেরেছি, যা সকলের চেয়ে বড়ো পাওয়া তা ছুয়ে পাওয়া নয়, তেমনি যা সকলের চেয়ে বড়ো দেওয়া তা হাতে করে দেওয়া নয়। তবু বল, কী হল বল। রোহিণী । আমি তো রাজার হাতে ফুল দিলুম, কিন্তু তিনি যে কিছু বুঝলেন এমন তো মনে হল ୩ ! সুদৰ্শনা । বলিস কী ! তিনি বুঝতে পারলেন না ? রোহিণী । না, তিনি অবাক হয়ে চেয়ে পুতুলটির মতো বসে রইলেন । কিছু বুঝলেন না। এইটে পাছে ধরা পড়ে সেইজন্যে একটি কথা কইলেন না । সুদৰ্শন ! ছি:৷ ছি:৷ ছি, আমার যেমন প্ৰগলভতা তেমনি শাস্তি হয়েছে। তুই আমার ফুল ফিরিয়ে আনলি নে কেন । রোহিণী । ফিরিয়ে আনব কী করে। পাশে ছিলেন কান্ধীর রাজা । তিনি খুব চতুর— চকিতে সমস্ত বুঝতে পারলেন ; মুচকে হেসে বললেন, “মহারাজ, মহিষী সুদর্শনা আজ বসন্তসখার পূজার পুষ্পে মহারাজের অভ্যর্থনা করছেন " শুনে হঠাৎ তিনি সচেতন হয়ে উঠে বললেন, “আমার রাজসম্মান পরিপূর্ণ হল ।’ আমি লজ্জিত হয়ে ফিরে আসছিলুম, এমন সময়ে কাঞ্চীর রাজা মহারাজের গলা থেকে স্বহস্তে এই মুক্তার মালাটি খুলে নিয়ে আমাকে বললেন, “সখী, তুমি যে সৌভাগ্য বহন করে এনেছ তার কাছে পরাভব স্বীকার করে মহারাজের কণ্ঠের মালা তোমার হাতে আত্মসমপণ করছে।” সুদৰ্শনা । কাঞ্চীর রাজাকে বুঝিয়ে দিতে হল ! আজকের পূর্ণিমার উৎসব আমার অপমান একেবারে উদঘাটিত করে দিলে। তা হােক, যা, তুই যা । আমি একটু একলা থাকতে চাই । (রোহিণীর প্রস্থান)। আজ এমন করে আমার দর্প চূর্ণ হয়েছে, তবু সেই মোহন রূপের কাছ থেকে মন ফেরাতে পারছি নে । অভিমান আর রইল না- পরাভব, সর্বত্রই পরাভব— বিমুখ হয়ে থাকব। সে শক্তিটুকুও লুই কেবল ইচ্ছে করছে, ঐ মালাটা ৰােহিণীর কাছ থেকে চেয়ে নিই। কিন্তু ও কী মনে করবে । রোহিণী । (প্ৰবেশ করিয়া) কী মহারানী । সুদৰ্শনা। আজকের ব্যাপারে তুই কি পুরস্কার পাবার যোগ্য । রোহিণী । তোমার কাছে না হােক, যিনি দিয়েছেন তার কাছ থেকে পেতে পারি। DB SS DD DSDDBD BDB BBDB DSS DB DDBO DBS রোহিণী। তবু, রাজকণ্ঠের অনাদরের মালাকেও অনাদর করি এমন স্পর্ধা আমার নয় । সুদৰ্শন । এ অবজ্ঞার মালা তোর গলায় দেখতে আমার ভালো লাগছে না । দে, ওটা খুলে দে । ওর বদলে আমার হাতের কঙ্কণটা তোকে দিলুম- এই নিয়ে তুই চলে যা । (রোহিণীর প্রস্থান) হার হল, আমার হার হল। এ মালা জুড়ে ফেলে দেওয়া উচিত ছিল— পারলুম না। এ যে কাটার মালার মতো আমার আঙুলে বিধছে, তবু ত্যাগ করতে পারলাম না। উৎসবদেবতার হাত থেকে এই কি আমি পেলুম- এই আগৌরবের মালা ।