পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S N V2 রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্বিতীয় মালী । চিরদিন যে রাজার কাজ করছি সেই রাজা । রোহিণী । তোরা সবাই চলে যাবি ! 影 প্রথম মালী। হাঁ, সবাই যাব, এখনই যেতে হবে। নইলে বিপদে পড়ব । ergr রোহিণী। এরা কী বলে বুঝতে পারি নে— ভয় করছে। যে নদীর পাড়ি ভেঙে পড়বে সেই পাড়ি ছেড়ে যেমন জন্তুরা পালায় এই বাগান ছেড়ে তেমনি সবাই পালিয়ে যাচ্ছে। । কোশল রাজ্যের প্রবেশ কোশল । রোহিণী, তোমাদের রাজা এবং কাঞ্চীরাজ কোথায় গেল জান । রোহিণী। তঁরা এই বাগানেই আছেন, কিন্তু কোথায় কিছুই জানি নে । কৌশল। তাদের মন্ত্রণাটা ঠিক বুঝতে পারছি নে। কাঞ্চীরাজকে বিশ্বাস করে ভালো করি নি। - [প্ৰস্থান রোহিণী। রাজাদের মধ্যে কী একটা ব্যাপার চলছে। শীঘ্র একটা দুদৈব ঘটবে। আমাকে সুদ্ধ জড়াবে না তো ? অবতীরাজ । (প্ৰবেশ করিয়া) রোহিণী, রাজারা সব কোথায় গেল জান । রোহিণী । তঁরা কে কোথায় তার ঠিকানা করা শক্ত । এইমাত্র কোশলরাজ এখানে ছিলেন । অবন্তী । কোশলরাজের জন্যে ভাবনা নেই। তোমাদের রাজা এবং কাঞ্চীরাজ কোথায় । রোহিণী । অনেকক্ষণ তাদের দেখি নি । অবষ্ঠী । কাঞ্চীরাজ কেবলই আমাদের এড়িয়ে এড়িয়ে বেড়াচ্ছে। নিশ্চয় ফাকি দেবে। এর মধ্যে থেকে ভালো করি নি। সখী, এ বাগান থেকে বেরোবার পথটা কোথায় জান । রোহিণী । আমি তো জানি নে । অবষ্ঠী । দেখিয়ে দিতে পারে এমন কোনো লোক নেই ? রোহিণী। মালীরা সব বাগান ছেড়ে গেছে। অবন্তী । কেন গেল । রোহিণী। তাদের কথা ভালো বুঝতে পারলুম না। তারা বললে, রাজা তাদের শীঘ্ৰ যাগান ছেড়ে যেতে বলেছেন । অবন্তী। রাজা ! কোন রাজা । রোহিণী । তারা স্পষ্ট করে বলতে পারলে না । অবন্তী । এ তো ভালো কথা নয়। যেমন করেই হােক এখান থেকে বেরোবার পথ খুঁজে বের করতেই হবে। আর এক মুহূর্ত এখানে নয়। ] [দ্রকৃত প্ৰস্থান রোহিণী । চিরদিন তো এই বাগানেই আছি কিন্তু আজ মনে হচ্ছে যেন বাধা পড়ে গেছি, বেরিয়ে পড়তে না পারলে নিষ্কৃতি নেই। রাজাকে দেখতে পেলে যে বীচি। পরশু যখন তাকে রানীর ফুল দিলুম তখন তিনি তো একরকম আত্মবিস্মৃত ছিলেন- তার পর থেকে তিনি আমাকে কেবলই পুরস্কার দিচ্ছেন। এই অকারণ পুরস্কারে আমার ভয় আরো বাড়ছে।— এত রাতে পাখিরা সব কোথায় উড়ে চলেছে ? এরা হঠাৎ এমন ভয় পেল কেন। এখন তো এদের ওড়বার সময় নয়। রানীর পােষা হরিণী ও দিকে দৌড়ল কোথায়। চপলা, চপলা! আমার ডাক শুনলাইনা। এমন তো কখনােই হয় না। চার দিকের দিগন্তু মাতালের চোখের মতো হঠাৎ লাল হয়ে উঠেছে। যেন চার দিকেই অকালে সূর্যস্ত হচ্ছে। বিধাতার এ কী উন্মত্ততা আজ ! ভয় হচ্ছে। রাজার দেখা কোথায় পাই।