পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ \996 তখনই বুড়ো দেওয়ানজিকে ডেকে পাঠালে। জিজ্ঞাসা করলে, “ভূষণ রায়রা করিমহাটি তালুক পত্তনি নিতে চেয়েছিল না ? কত পণ দেবে ?” দেওয়ান বললে, “বিশ হাজার পর্যন্ত উঠতে পারে।” “ভূষণ রায়কে তলব দিয়ে পাঠাও। কথাবার্তা কইতে চাই ।” বিপ্রদাস বংশের বড়ো ছেলে। তার জন্মকালে তার পিতামহ এই তালুক স্বতন্ত্র ভাবে তাকেই দান করেছেন । ভূষণ রায় মস্ত মহাজন, বিশ-পঁচিশ লাখ টাকার তেজারিতি। জন্মস্থান করিমহাটিতে । এইজন্যে অনেকদিন থেকে নিজের গ্রাম পত্তানি নেবার চেষ্টা । অর্থসংকটে মাঝে মাঝে বিপ্ৰদাস রাজি হয় আর-কি, কিন্তু প্ৰজারা কেঁদে পড়ে। বলে, ওকে আমরা কিছুতেই জমিদার বলে মানতে পারব না। তাই প্ৰস্তাবটা বারে বারে যায় ফেসে । এবার বিপ্ৰদাস মন কঠিন করে বসল। ও নিশ্চয় জানে, সুবােধের টাকার দাবি এইখানেই শেষ হবে না। মনে মনে বললে, আমার তালুকের এই সেলামির টাকা রইল সুবোধের জন্যে, তার পর দেখা যাবে। দেওয়ান বিপ্রদাসের মুখের উপর জবাব দিতে সাহস করলে না। গোপনে কুমুকে গিয়ে বললে, “দিদি, তোমার কথা বড়োবাবু শোনেন । বারণ করে তঁাকে, এটা অন্যায় হচ্ছে।” «م বিপ্রদাসকে বাড়ির সকলেই ভালোবাসে । কারও জন্যে বড়োবাবু যে নিজের স্বত্ব নষ্ট করবে, এ ওদের গায়ে সয় না । বেলা হয়ে যায়। বিপ্রদাস ঐ তালুকের কাগজপত্র নিয়ে ঘটছে। এখনো স্নানাহার হয় নি। কুমু বারে বারে তাকে ডেকে পাঠাচ্ছে । শুকনো মুখ করে এক সময়ে অন্দরে এল । যেন বাজে-ছোওয়া পাতা-ঝলসানো গাছের মতো ! কুমুর বুকে শেল বিধল । স্নানাহার হয়ে গেলে পর বিপ্ৰদাস আলবোলার নল-হাতে খাটের বিছানায় পা ছড়িয়ে তাকিয়া ঠেসান দিয়ে বসল। যখন, কুমু তার শিয়রের কাছে বসে ধীরে ধীরে তার চুলের মধ্যে হাত বুলোতে বুলোতে বললে, “দাদা, তোমার তালুক তুমি পত্তনি দিতে পারবে না।” “তোকে নবাব সিরাজউদ্দৌলার ভূতে পেয়েছে নাকি ? সব কথাতেই জুলুম ?” "ना नाना, कथा 5ा०ों निशा ना ।” তখন বিপ্রদাস আর থাকতে পারলে না, সোজা হয়ে উঠে বসে কুমুকে শিয়রের কাছ থেকে সরিয়ে সামনে বসালে । রুদ্ধ স্বরটাকে পরিষ্কার করবার জন্যে একটুখানি কেশে নিয়ে বললে, “সুবোধ কী লিখেছে জানিস ? এই দেখা।” এই বলে জামার পকেট থেকে তার চিঠি বের করে কুমুর হাতে দিলে। কুমু সমস্তটা পড়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে বললে, “মাগো, ছোড়দাদা এমন চিঠিও লিখতে পারলে ?” বিপ্ৰদাস বললে, “ওর নিজের সম্পত্তি আর আমার সম্পত্তিতে ও যখন আজ ভেদ করে দেখতে পেরেছে তখন আমার তালুক আমি কি আর আলাদা রাখতে পারি ? আজ ওর বাপ নেই, বিপদের সময়ে আমি ওকে দেব না তো কে দেবে ?” এর উপর কুমু আর কথা কইতে পারলে না, নীরবে তার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। বিপ্রদাস তাকিয়ায় আবার ঠেস দিয়ে চোখ বুজে রইল । অনেকক্ষণ দাদার পায়ে হাত বুলিয়ে অবশেষে কুমু বললে, “দাদা, মায়ের ধন তো এখন মায়েরই র্তার সেই গয়না থাকতে তুমি কেন-” বিপ্রদাস আবার চমকে উঠে বসে বললে, “কুমু, এটা তুই কিছুতে বুঝলি নে, তোর গয়না নিয়ে সুবোধ আজ যদি বিলেতে থিয়েটার-কনসার্ট দেখে বেড়াতে পারে তা হলে আমি কি তাকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারব।-- না, সে কোনোদিন মুখ তুলে দাড়াতে পারবে ? তাকে এত শান্তি কেন দিবি ?” কুমু চুপ করে রইল, কোনো উপায় সে খুঁজে পেল না। তখন, অনেকবার যেমন ভেবেছে তেমনি করেই ভাবতে লাগিল- অসম্ভব কিছু ঘটে না কি ? আকাশের কোনো গ্ৰহ, কোনো নক্ষত্র এক মুহুর্তে সমস্ত বাধা সরিয়ে দিতে পারে না ? কিন্তু শুভলক্ষণ দেখা দিয়েছে যে, কিছুদিন থেকে বারবার তার বা al