রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী " ... اما চোখ নাচছে। এর পূর্বে জীবনে আরো অনেকবার বা চোখ নেচেছে, তা নিয়ে কিছু ভাববার দরকার হয় নি । এবারে লক্ষণটাকে মনে মনে ধরে পড়ল । যেন তার প্রতিশ্রুতি তাকে রাখতেই হবেশুভলক্ষণের সত্যভঙ্গ যেন না হয় । N O বাদলা করেছে। বিপ্ৰদাসের শরীরটা ভালো নেই। বাল্যাপোশ মুড়ি দিয়ে আধশোওয়া অবস্থায় খবরের কাগজ পড়ছে। কুমুর আদরের বিড়ালটা বাল্যাপোশের একটা ফালতো অংশ দখল করে গোলাকার হয়ে নিদ্রামগ্ন । বিপ্ৰদাসের টেরিয়র কুকুরটা অগত্যা ওর স্পর্ধা সহ্য করে মনিবের পায়ের কাছে শুয়ে স্বপ্নে এক-একবার গো গো করে উঠছে । এমন সময়ে এল আর-এক ঘটক । “নমস্কার ।” “কে তুমি ?” “আজ্ঞে, কর্তারা আমাকে খুবই চিনতেন, (মিথ্যে কথা) আপনারা তখন শিশু । আমার নাম নীলমণি ঘটক, ‘গঙ্গামণি ঘটকের পুত্র।” “S single " “ভালো পাত্রের সন্ধান আছে। আপনাদেরই ঘরের উপযুক্ত ।” বিপ্রদাস একটু উঠে বসল। ঘটক রাজাবাহাদুর মধুসূদন ঘোষালের নাম করলে। বিপ্ৰদাস বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “ ছেলে আছে নাকি ?” ঘটক জিভ কেটে বললে, “না, তিনি বিবাহ করেন নি। প্রচুর ঐশ্বর্য। নিজে কাজ দেখা ছেড়ে দিয়েছেন, এখন সংসার করতে মন দিয়েছেন ।” বিপ্রদাস খানিকক্ষণ বসে গুড়গুড়িতে টান দিতে লাগল। তার পরে হঠাৎ এক সময়ে একটু যেন জোর করে বলে উঠল, “বয়সের মিল আছে এমন মেয়ে আমাদের ঘরে নেই।” ঘটক ছাড়তে চায় না, বরের ঐশ্বর্যের যে পরিমাণ কত, আর গবর্নরের দরবারে তার আনাগোনার পথ যে কত প্ৰশস্ত, ইনিয়ে-বিনিয়ে তারই ব্যাখ্যা করতে লাগিল । বিপ্ৰদাস আবার স্তম্ভিত হয়ে বসে রইল। আবার অনাবশ্যক বেগের সঙ্গে বলে উঠল, “বয়সে भिव्लाद ना ।” ঘটক বললে, “ভেবে দেখবেন, দু-চারদিন বাদে আর-একবার আসব ।” বিপ্ৰদাস দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আবার শুয়ে পড়ল । দাদার জন্যে গরম চা নিয়ে কুমু ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিল। দরজার বাইরে গামছাসুদ্ধ একটা ভিজে জীর্ণ ছাতি ও কাদামাখা তালতলার চটি দেখে থেমে গেল । ওদের কথাবার্তা অনেকখানি কানে পীেছল । ঘটক তখন বলছে, “রাজাবাহাদুর এবার বছর না যেতে মহারাজা হবেন এটা একেবারে লাটসাহেবের নিজ মুখের কথা । তাই এতদিন পরে তার ভাবনা ধরেছে, মহারানীর পদ এখন আর খালি রাখা চলবে না। আপনাদের গ্রহাচার্য কিনু ভট্টচাজ দূরসম্পর্কে আমার সম্বন্ধী, তার কাছে কন্যার কুষ্ঠি দেখা গেলা- লক্ষণ ঠিকটি মিলেছে। এই নিয়ে শহরের মেয়ের কুষ্ঠি ঘাটতে বাকি রাখি নি- এমন কুষ্ঠি আর একটিও হতে পড়ল না । এই দেখে নেবেন, আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি, এ সম্বন্ধ হয়েই গেছে, এ প্ৰজাপতির নির্বন্ধ ।” ঠিক এই সময়ে কুমুর আবার বা চোখ নাচল । শুভলক্ষণের কী অপূর্ব রহস্য ! কিনু আচার্ষি কতবার তার হাত দেখে বলেছে, রাজরানী হবে সে । কারকোষ্ঠির সেই পরিণত ফলটা আপনি যেচে আজ তার কাছে উপস্থিত । ওদের গ্ৰহাচার্য এই কদিন হল বার্ষিক আদায় করতে কলকাতায় এসেছিল ; সে বলে গেছে, এবার আষাঢ় মাস থেকে বৃষ রাশির রাজসম্মান, স্ত্রীলোকঘটিত অর্থলাভ, শত্ৰুনাশ ; মন্দের মধ্যে পত্নীপীড়া, এমনকি, হয়তো পত্নীবিয়োগ । বিপ্ৰদাসের বৃষ রাশি । মাঝে মাঝে
