পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8S রবীন্দ্র-রচনাবলী চাটাই দিয়ে ঘেরা ঘটে। ঘাটের উপরেই মস্ত নিমগাছের গায়ে কাঠের ফলকে লেখা, "মধুসাগর । খানিকটা জমিতে নানা আকারের চানকায় সূর্যমুখী, রজনীগন্ধা, গাদা, দোপাটি, ক্যােনা ও পাতাবাহার, কাঠের চৌকো বাক্সে নানা রঙের বিলিতি ফুল। মাঝে একটি ছােটাে বঁধানাে জলাশয়, তারই মধ্যে লোহার ঢালাই-করা নগ্ন স্ত্রীমূর্তি, মুখে শাখ তুলে ধরেছে, তার থেকে ফোয়ারার জল বেরোবে। এই জায়গািটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মধুকুঞ্জ’। প্রবেশপথে কারুকাজ-করা লোহার গেট, উপরে নিশান উড়ছে- নিশানে লেখা "মধুপুরী । চারি দিকেই ‘মধু নামের ছাপ | নানা রঙের কাপড়ে কানাতে চাঁদােয়ায় নিশানে রঙিন ফুলে চীনালন্ঠনে হঠাৎ তৈরি এই মায়াপুরী দেখবার জন্যে দূর থেকে দলে দলে লোক আসতে লাগল। এ দিকে ঝকঝকে চাপরাস-ঝোলানো, হলদের উপর লাল পাড় দেওয়া পাগড়ি-বাঁধা, জরির ফিতে-দেওয়া লাল বনাতের উদিপরা চাপরাসির দল বিলিতি জুতাে মসমিসিয়ে বেড়ায়, সন্ধ্যাবেলায় বন্দুকে ফাঁকা আওয়াজ করে, দিনরাত প্রহরে প্রহরে ঘণ্টা বাজায়, তাদের কারও কারও চামড়ার কোমরবন্ধে ঝোলানো বিলিতি তলোয়ারটা জমিদারের মাটিকে পায়ে পায়ে খোচা দিতে থাকে । চাটুজ্যেদের সাবেক কালের জীর্ণসাজপরা বরকন্দাজেরা লজ্জায় ঘর হতে বার হতে চায় না । কাণ্ড দেখে চাটুজ্যে-পরিবারের গায়ে জ্বালা ধরল। নুরনগরের পাজরটার মধ্যে বিধিয়ে দিয়ে শেলদণ্ডের উপর আজ ঘোষালদের জয়পতাকা উড়েছে। শুভপরিণয়ের এই সূচনা। SG বিপ্রদাস নবগোপালকে ডেকে বললে, “নবু, আড়ম্বরে পাল্লা দেবার চেষ্টা-ওটা ইতরের কাজ ।” নবগোপাল বললে, “চতুর্মুখ তার পা ঝাড়া দিয়েই বেশি মানুষ গড়েছেন ; চারটে মুখ কেবল বড়ো বড়ো কথা বলবার জন্যেই। সাড়ে পনেরো-আনা লোক যে ইতর, তাদের কাছে সম্মান রাখতে হলে বিপ্রদাস বললে, “তাতেও তুমি পেরে উঠবে না । তার চেয়ে সাত্ত্বিকভাবে কাজ করি, সে দেখাবে ভালো । উপযুক্ত ব্ৰাহ্মণপণ্ডিত আনিয়ে আমাদের সামবেদের মতে বিশুদ্ধভাবে অনুষ্ঠান পালন করব । ওরা রাজা হয়েছে করুক আড়ম্বর ; আমরা ব্ৰাহ্মণ, পুণ্যকর্ম আমাদের ।” নবগোপাল বললে, “দাদা, পাজি ভুলেছ, এটা সত্যযুগ নয়। জলের নীেকো চালাতে চাও পাকের উপর দিয়ে ! তোমার প্রজারা আছে- তিনু সরকার আছে তোমার তালুকদার- ভাদু পরামানিক, কমরদি বিশ্বেস, পাচু মণ্ডল- এরা কি তোমার ঐ কঁচকলাভাতে হবিষ্যি-করা বামনাইয়ের এক অক্ষর মানে বুঝবে ? এরা কি যাজ্ঞবল্ক্যের প্রপৌত্ৰ ? এদের যে বুক ফেটে যাবে । তুমি চুপ করে থাকো, তোমাকে কিছু "ভাবতে হবে না।” নবগোপাল প্রজাদের সঙ্গে মিলে উঠে-পড়ে লাগল। সবাই বুক ঠুকে বললে, টাকার জন্যে ভাবনা কী ? আমলা ফয়লা পাইক বীরকন্দাজ সবারই গায়ে চড়ল। নতুন লাল বনাতের চাদর, রঙিন ধুতি । সালুতে-মোড়া ঝালার-ঝোলানো নিশেন-ওড়ানো এক নহবতখানা উঠল, সাত ক্রোশ তফাত থেকে তার চূড়ো দেখা যায়। দুই শরিকে মিলে তাদের চার চার হাতি বের করলে, সাজ চড়ল তাদের পিঠে, যখন-তখন বিনা কারণে ঘোষালদিঘির সামনের রাস্তায় শুড় দুলিয়ে দুলিয়ে তারা টহলিয়ে বেড়ায়, গলায় ঢং ঢেং করে ঘণ্টা বাজতে থাকে । আর যাই হােক, পাটের বস্তা থেকে হাতি বের হয় না, এই বলে সকলেই দুই পা চাপড়ে হাে হাে করে হেসে নিলে । অম্রানের সাতাশে পড়েছে বিয়ের দিন ; এখনো দিনদশেক বাকি। এমন সময় লোকমুখে জানা গেল, রাজা আসছে দলবল নিয়ে। ভাবনা পড়ে গেল, কর্তব্য কী । মধুসূদন এদের কাছে কোনো খবর দেয় নি। বুঝি মনে করেছে ভদ্রতা সাধারণ লোকের, অভদ্রতাই রাজ্যোচিত । এমন অবস্থায় নিজেরা গায়ে পড়ে স্টেশন থেকে ওদের এগিয়ে আনতে যাওয়া কি সংগত হবে ? খবর না-দেওয়ার উচিত छवाद द52 शव की-(RGशीं । "