পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○88 রবীন্দ্র-রচনাবলী বিপ্রদাস বাঘ-শিকারে জেলার মধ্যে সাব-সেরা । কোনো-একবার পাখি মেরে তার এমন থিৰ । হয়েছিল যে, সেই অবধি নিজের এলাকায় পাখি মারা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। শিয়রের কাছে কুমু বসে বিপ্রদাসের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। নবগােপাল চলে গেলে সেন্ম শক্ত করে বললে, “দাদা, বারণ করে পাঠাও।” “কী বারণ করব ?” “পাখি মারতে ।” “ওরা ভুল বুঝবে কুমু, সইবে না।” । “তা বুকুক ভুল। মান-অপমান শুধু ওদের একলার নয় ?” বিপ্রদাস কুমুর মুখের দিকে চেয়ে মনে মনে হাসলে। সে জানে কঠিন নিষ্ঠার সঙ্গে কুমু মনে মনে সতীধর্ম অনুশীলন করছে। ছায়েবানুগতাস্বচ্ছা। সামান্য পাখির প্রাণ নিয়ে কায়ার সঙ্গে ছায়ার পথভেদ शोत्र न कि ? বিপ্রদাস স্নেহের স্বরে বললে, “রাগ করিস নে কুমু, আমিও একদিন পাখি মেরেছি। তখন অনায় বলে বুঝতেই পারি নি। এদেরও সেই দশা ।” অক্লান্ত উৎসাহের সঙ্গে চলল শিকার, পিকনিক, এবং সন্ধেবেলায় ব্যান্ডের সংগীত-সহযোগে ইংরেজ অভ্যাগতদের নাচ । বিকালে টেনিস, তা ছাড়া দিঘির নীেকের পরে তিন-চার পর্দা তুলে দিয়ে বাজি রেখে পালের খেলা ; তাই দেখতে গ্রামের লোকেরা দিঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে যায়। রাত্রে ডিনারের পরে চীৎকার চলে, ফর হী ইজ এ জলি গুড ফেলো ।” এই-সব বিলাসের প্রধান নায়ক নায়িকা সাহেব-মেম, তাতেই গায়ের লোকের চমক লাগে । এরা যে সোলার টুপি মাথায় ছিপ ফেলে মাছ ধরে, সেও বড়ো অপরূপ দৃশ্য। অন্য পক্ষে লাঠিখেলা কুস্তি নীেকোবাচ। যাত্রা শখের থিয়েটার এবং চারটি হাতির সমাবেশ এর কাছে লাগে কোথায় ? বিবাহের দুদিন আগে গায়ে হলুদ। দামি গয়না থেকে আরম্ভ করে খেলার পুতুল পর্যন্ত সওগাত যা বরের বাসা থেকে এল তার ঘটা দেখে সকলে অবাক । তার বাহনই বা কত ! চাটুজ্যেরা খুব দরাজ অবশেষে জনসাধারণকে খাওঁয়ানো নিয়ে বৈবাহিক কুরুক্ষেত্রের দ্ৰোণপৰ্ব শুরু হল । সেদিন ঢোল পিটিয়ে সর্বসাধারণের নিমন্ত্রণ মধুসাগরের তীরে মধুপুরীতে । রবাহুত অনাহূত কারও বাদ নেই। নবগোপাল রেগে আগুন । এ কী আম্পর্ধা ! আমরা হলুম জমিদার, এর মধ্যে উনি ওঁর মধুপুরী খাড়া করেন কোথা থেকে ? এ দিকে ভোজের আয়োজনটা খুব ব্যাপকররূপেই সকলের কাছে প্ৰকাশমান হয়ে উঠল । সামান্য ফলার নয়। মাছ দই ক্ষীর সন্দেশ ঘি ময়দা চিনি খুব শোরগোল করে আমদানি । গাছতলায় মন্ত মন্ত উনন পাতা ; রান্নার জন্যে নানা আয়তনের হাড়ি হাড় মালসা কলসী জালা ; সারবন্দি গোরুর গাড়িতে এল আলু বেগুন কঁচকলা শাকসবজি। আহারটা হবে সন্ধের সময় বাধা রোশনাইয়ের আলোয় । এ দিকে চাটুজ্যেদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন। দলে দলে প্রজারা মিলে নিজেরাই আয়োজন করেছে। হিন্দুদের মুসলমানদের স্বতন্ত্র জায়গা। মুসলমান প্রজার সংখ্যাই বেশি- রাত " পেয়াতেই তারা নিজেরাই রান্না চড়িয়েছে। আহারের উপকরণ যত না হােক, ঘন ঘন চাটুজ্যোির জয়ধ্বনি উঠছে তার চতুর্গুণ। স্বয়ং নবগোপালবাবু বেলা প্রায় পাঁচটা পর্যন্ত অভুক্ত অবস্থায় বলে ব্যবস্থা করলে। কলধ্বনিতে জয়ধ্বনিতে বাতাসে চলল সমুদ্রমন্থন। মধুপুরীতে সমস্তদিন রান্না বসেছে। গন্ধে বহুদূর পর্যন্ত আমোদিত । খুরি ভীড় কলাপাত হয়ে পর্বতপ্রমাণ। তরকারি ও মাছ কোটার আবর্জনা নিয়ে কাকেদের কলরবের বিরাম নেই- রা*ে* কুকুরগুলোও পরস্পর কামড়াকামড়ি চেঁচামেচি বাধিয়ে দিয়েছে। সময় হয়ে এল, রোশনাই জ্ব"* মেটিয়াবুরুজের রোশনােচৗকি ইমনকল্যাণ থেকে কেদারা পর্যন্ত বাজিয়ে চলল। অনুচরপরিচর্ণ"