যোগাযোগ 088 বিপ্রদাস একটু লক্ষ্য করে বললে, “কী, বৈকুণ্ঠ নাকি ?” বিপ্রদাস বাল্যকালে যে ইস্কুলে পড়ত সেই ইস্কুলেরই সংলগ্ন একটা ঘরে বৈকুণ্ঠ ইস্কুলের বই খাতা কলম ছুরি ব্যাটবল লাঠিম আর তারই সঙ্গে মোড়কে-করা চীনাবাদাম বিক্রি করত। তার ঘরে বড়ো ছেলেদের আড্ডা ছিল— যতরকম অদ্ভুত অসম্ভব খোশগল্প করতে এর জুড়ি কেউ ছিল না । বিপ্ৰদাস জিজ্ঞাসা করলে, “তোমার, এমন দশা কেন ?” kı কয়েক বৎসর হল সম্পন্ন অবস্থার গৃহস্থের ঘরে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। তাদের পণের বিশেষ কোনো আবশ্যক ছিল না বলেই বরের পণও ছিল বেশি । বারোশো টাকায় রফা হয়, তা ছাড়া আশি ভরি সোনার গয়না । একমাত্র আদরের মেয়ে বলেই মরিয়া হয়ে সে রাজি হয়েছিল । একসঙ্গে সব টাকা সংগ্ৰহ করতে পারে নি, তাই মেয়েকে যন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে ওরা বাপের রক্ত শুষেছে। সম্বল সবই ফুরোল তবু এখনো আড়াইশো টাকা বাকি। এবারে মেয়েটির অপমানের শেষ নেই। অত্যন্ত অসহ্য । হওয়াতেই বাপের বাড়ি পালিয়ে এসেছিল। তাতে করে জেলের কয়েদির জেলের নিয়ম ভঙ্গ করা হল, অপরাধ বেড়েই গেল। এখন ঐ আড়াইশো টাকা ফেলে দিয়ে মেয়েটাকে বাচাতে পারলে বাপ মরবার কথাটা ভাববার সময় পায় । বিপ্ৰদাস স্নান হাসি হাসলে । যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করবার কথা সেদিন ভাববারও জো ছিল না । ক্ষণকালের জন্যে ইতস্তত করলে, তার পরে উঠে গিয়ে বাক্স থেকে থলি ঝেড়ে দশটি টাকার নোট এনে তার হাতে দিল। বললে, “আরো দু-চার জায়গা থেকে চেষ্টা দেখো, আমার আর সাধ্য নেই।” বৈকুণ্ঠ সে কথা একটুও বিশ্বাস করলে না। পা টেনে টেনে চলে গেল, চটজুতোয় অত্যন্ত অপ্ৰসন্ন শব্দ । সেদিনকার এই ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিল, আজ হঠাৎ বিপ্রদাসের মনে পড়ল। দেওয়ানজিকে ডেকে হুকুম হল- বৈকুণ্ঠকে আজই আড়াইশো টাকা পাঠানো চাই। দেওয়ানজি চুপ করে দাড়িয়ে মাথা চুলকোয় । জেদ্দাজেদির মুখে খরচ করে বিবাহ তো চুকেছে, কিন্তু অনেকদিন ধরে তার হিসাব শোধ করতে হবে- এখন দিনের গতিকে আড়াইশো টাকা যে মন্তবড়ো অঙ্ক । দেওয়ানজির মুখের ভাব দেখে বিপ্রদাস আঙুল থেকে হীরের আংটি খুলে বললে, “ছোটােবাবুর নামে যে টাকা ব্যাঙ্কে জমা রেখেছি, তার থেকে ঐ আড়াইশো টাকা নাও, তার বদলে আমার আংটি বন্ধক রইল। বৈকুণ্ঠকে টাকাটা যেন কুমুর নামে পাঠানো হয় ।” δ δυ বিবাহের লঙ্কাকাণ্ডের সব-শেষ অধ্যায়টা এখনো বাকি । সকালবেলায় কুশণ্ডিকা সেরে তবে বরকনে যাত্রা করবে। এই ছিল কথা। নবগোপাল তারই সমস্ত উদযোগ ঠিক করে রেখেছে। এমন সময় বিপ্রদাসের ঘর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এসে রাজাবাহাদুর বলে বসল- কুশণ্ডিকা হবে বরের ওখানে, মধুপুরীতে। প্রস্তাবের ঔদ্ধতাটা নবগোপালের কাছে অসহ্য লাগল। আর কেউ হলে আজ একটা ফৌজদারি বাধত । তবু ভাষার প্রাবল্যে নবগোপালের আপত্তি প্ৰায় লাঠিয়ালির কাছ পৰ্যন্ত এসে তবে থেমেছিল । । অন্তঃপুরে অপমানটা খুব বাজল। বহুদূর থেকে আত্মীয়-কুটুম সব এসেছে, তাদের মধ্যে ঘরশত্রুর অভাব নেই। সবার সামনে এই অত্যাচার। ক্ষেমপিসি মুখ গো করে বসে রইলেন। বরকনে যখন বিদায় নিতে এল তার মুখ দিয়ে যেন আশীৰ্বাদ বেরোতে চাইল না। সবাই বললে, এ কাজটা কলকাতায় সেরে নিলে তো কারও কিছু বলবার কথা থাকত না। বাপের বাড়ির অপমানে কুমু একান্তই সংকুচিত হয়ে গেল- মনে হতে লািগল সে-ই যেন অপরাধিনী তার সমস্ত পূর্বপুরুষদের . কাছে। মনে মনে তার ঠাকুরের প্রতি অভিমান করে বার বার জিজ্ঞাসা করতে লাগল, “আমি তোমার দুঃ সু করেছি যেজনে আমার এত শক্তি! আমি তাে তোমাকেই বিশ্বাস করে সমন্ত স্বীকার
