পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ \OAS নিরুত্তর থাকাতেই তার উত্তর স্পষ্ট হল । ঝা করে মাথায় রক্ত গেল চড়ে, মুখ হল। লাল টকটকেএত রাগ হল যে, কণ্ঠ দিয়ে কথা বেরোল না । সবেগে হাত নেড়ে নবীনকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে ইশারা করে ঘরের এক ধার থেকে আর-এক ধার পর্যন্ত পায়চারি করতে লাগল। WO নবীন ঘরে গিয়ে মুখ শুকনো করে মোতির মাকে বললে, “মেজেবিউ, আর কেন ?” “হয়েছে কী ?” “এবার জিনিসপত্রগুলো বাক্সয় তোলো ।” ብ፡ “তোমার বুদ্ধিতে যদি তুলি, তা হলে আবার কালই বের করতে হবে । কেন ? তোমার দাদার মেজাজ ভালো নেই বুঝি ?” “আমি তো চিনি ওঁকে। এবার বােধ হচ্ছে এখানকার বাসায় হাত পড়বে।” “তা চলোই-না ! অত ভাবিছ কেন ? সেখানে তো জলে পড়বে না ?” “আমাকে চলতে বলছ কিসের জন্যে ? এবারে হুকুম হবে মেজেবিউকে দেশে পাঠিয়ে দাও।” “সে হুকুম তুমি মানতে পারবে না জানি।” । “কেমন করে জানলে ?” “আমি কেবল একাই জানি মনে কর, তা নয়- বাড়িসুদ্ধ সবাই তোমাকে স্ত্রৈণ বলে জানে ! পুরুষমানুষ যে কী করে স্ত্রৈণ হতে পারে এতদিন তোমার দাদা সে কথা বুঝতেই পারত না । এইবার নিজের বোঝবার পালা এসেছে ।” “दब्न दी ?” “আমি তো দেখছি তোমাদের বংশে ও রোগটা আছে। এতদিন বড়োভাইয়ের ধাতটা ধরা পড়ে নি। অনেক কাল জমা হয়ে ছিল বলে তার ঝাজটা খুব বেশি হবে, দেখে নিয়ো এই আমি বলে দিলাম। যে জোরের সঙ্গে জগৎ-সংসার ভুলে টাকার থলে আঁকড়ে বসেছিল, ঠিক সেই জোরটাই পড়বে বউয়ের উপর ।” “তই পড়ুক । বড়ো ন্ত্রৈণটি আসর জমান। কিন্তু মেজো ন্ত্রৈণটি বাঁচবে কাকে নিয়ে ?” । “সে ভাবনার ভার আমার উপরে । এখন আমি তোমাকে যা বলি তাই করে । ওঁর দেরাজ তোমাকে সন্ধান করতে হবে ।” নবীন হাত জোড় করে বললে, “দোহাই তোমার মেজেবিউ— সাপের গর্তে হাত দিতে যদি বলতে আমি দিতুম, কিন্তু দেরাজে না।” “সাপের গর্তে যদি হাত দিতে হত। তবে নিজে দিতুম কিন্তু দেরাজটা সন্ধান তোমাকেই করতে হবে । তুমি তো জান এ বাড়ির সব চিঠিই প্ৰথমে ওঁকে না দেখিয়ে কাউকে দেবার হুকুম নেই। আমার মন বলছে। ওঁর হাতে চিঠি এসেছে।” । “আমারও মন তাই বলছে, কিন্তু সেইসঙ্গে এও বলছে ও চিঠিতে যদি আমি হাত ঠেকাই তা হলে দাদা উপযুক্ত দণ্ড খুঁজেই পাবে না। বোধ হয় সাত বছর সশ্রম ফাসির হুকুম হবে।” “কিছু তোমাকে করতে হবে না, চিঠিতে হাত দিয়ে না, কেবল একবার দেখে এসো দিদির নামে ििठे आएछ कि ना ।” মেজেবিউয়ের প্রতি নবীনের ভক্তি সুগভীর, এমনকি, নিজেকে তার স্ত্রীর অযোগ্য বলেই মনে করে। সেইজন্যেই তার জন্যে কোনো-একটা দুরূহ কাজ করবার উপলক্ষ জুটলে যতই ভয় করুক সেইসঙ্গে খুশিও হয় । সেই রাত্রেই নবীনের কাছে মেজেবিউ খবর পেল যে, কুমুর নামে একটা চিঠি ও একটা টেলিগ্রাম দেরাজে আছে । যে উত্তেজনার প্রথম ধাক্কায় কুমু তার শোবার ঘর ছেড়ে দাস্যবৃত্তিতে প্ৰবৃত্ত হয়েছিল, তার বেগ