পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Vo রবীন্দ্র-রচনাবলী হবে। নবীনের মুশকিল। এই যে, সে মধুসূদনের আপিসের ইতিবৃত্তান্ত কিছুই জানে না। ইশারাতেও সাহায্য খাটবে না । বেঙ্কটস্বামী মুগ্ধবোধের সূত্র আওড়ায় আর মধুসূদনের মুখের দিকে আড়ে আড়ে চায়। আজকের দিনের নামের বেলায়। ভৃগুমুনি সম্পূর্ণ নীরব । হঠাৎ শাস্ত্রী বলে বসল, শক্ৰতা করছে। একজন স্ত্রীলোক । নবীন হাফ ছেড়ে বাঁচল। সেই স্ত্রীলোকটি যে শ্যামাসুন্দরী এইটে কোনোমতে খাড়া করতে পারলে আর ভাবনা নেই। মধুসূদন নাম চায়। শাস্ত্রী তখন বর্ণমালার বর্গ শুরু করলে। ‘কবর্গ শব্দটা বলে যেন অদৃশ্য ভৃগুমুনির দিকে কান পেতে রইল- কটাক্ষে দেখতে লািগল মধুসূদনের দিকে । ‘কবর্গ শুনেই মধুসূদনের মুখে ঈষৎ একটু চমক দিলে। ও দিকে পিছন থেকে 'না' সংকেত করে নবীন ডাইনে বঁায়ে লাগাল ঘাড়-নাড়া । নবীনের জানাই নেই যে মাদ্রাজে। এ সংকেতের উলটাে মানে । বেঙ্কটস্বামীর আর সন্দেহ রইল না- জোরগলায় বললে, “ক’বর্গ। মধুসূদনের মুখ দেখে ঠিক বুঝেছিল ‘ক’বর্গের প্রথম বর্ণটাই । তাই কথাটাকে আরো একটু ব্যাখ্যা করে শাস্ত্রী বলে, এই কয়ের মধ্যেই মধুসূদনের সমস্ত কু। এর পরে পুরো নাম জানবার জন্যে পীড়াপীড়ি না করে ব্যগ্র হয়ে মধুসূদন জিজ্ঞাসা করলে, “এর প্ৰতিকার ?” শ্ৰেষ্ঠ গভীরভাবে বলে দিলে, "কণ্টকমৰ কষ্টকা— অর্থাৎ উদ্ধার করবে। অন্য একজন "ן মধুসূদন চকিত হয়ে উঠল। বেঙ্কটস্বামী মানবচরিত্রবিদ্যার চর্চা করেছে। বেঙ্কটস্বামী জানে অধিকাংশ ঘোড়াই জেতে না, একটু হিসাবের ভান করে বলে দিলে, “লোকসান দেখতে পাচ্ছি।” কিছুকাল আগেই মধুসূদনের ঘোড়া মস্ত জিত জিতেছে। মধুসূদনকে কোনো কথা বলবার সময় না। দিয়ে মুখ অত্যন্ত বিমর্ষ করে নবীন জিজ্ঞাসা করলে, “স্বামীজি, আমার কন্যাটার কী গতি হবে ?” বলা বাহুল্য, নবীনের কন্যা নেই। বেঙ্কটস্বামী নিশ্চয় ঠাওরালে পাত্র খুঁজছে। নবীনের চেহারা দেখেই বুঝলে মেয়েটি অন্সরা নয় । বলে দিলে, পাত্র শীঘ্ৰ মিলবে না, অনেক টাকা ব্যয় করতে হবে । মধুসূদনকে একটু অবসর না দিয়ে পরে পরে দশ-বারোটা অসংগত প্রশ্নের অদ্ভুত উত্তর বের করে নিয়ে নবীন বললে, “দাদা, আর কেন ? এখন চলো ।” গাড়িতে উঠেই নবীন বলে উঠল, “দাদা, ওর সমস্ত চালাকি । ভণ্ড কোথাকার ।” “কিন্তু সেদিন যে-” “সেদিন ও আগে থাকতে খবর নিয়েছিল |” “কেমন করে জানলে যে আমি আসব ?” “আমারই বোকামি। ঘাট হয়েছে। ওর কাছে তোমাকে এনেছিলুম।” জ্যোতিষীর প্রতারণার প্রমাণ যতই পাক, “ক’বর্গের কু মধুসূদনের মনে বিধে রইল। ভেবে দেখলে যে, নক্ষত্র অনাদর করে খুচরো প্রশ্নের যা তা জবাব দেয়, কিন্তু আদিত প্রশ্নের জবাবে ভুল হয় না। মুকুনুর প্রতাশই করে দি সেই দুঃসময় গুর বিবাহের সঙ্গে সঙ্গেই এল। এর চেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ शद ? ঠা আন্তে আস্তে কৰা পাল "দাদা,ই সপ্তাহ তাে কেেট গেল,এইবার বউরালীকে আনেিয় "ן “কেন, তাড়া কিসের ? দেখো নবীন, তোমাকে বলে রাখলুম। আর কখনোই এসব কথা আমার কাছে তুলবে না। যেদিন আমার খুশি আমি আনিয়ে নেব।” * নবীন দাদাকে চেনে, বুঝলে এ কথাটা খতম হয়ে গেল ।