পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88の রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী “ঠাকুরপাে, তােমরা দুজনে মিলে কথা-কাটাকাটি করো, তৃতীয় ব্যক্তি ছন্দােভঙ্গ করতে চায় না, এখন আমি চললুম।” A. মোতির মা বললে, “সে কি কথা ভাই ! এখানে তৃতীয় ব্যক্তিটা কে ? তুমি না। আমি ? গাড়িভাড়া করে ও কি আমাকে দেখতে এসেছে ভেবেছ ?” “না, ওর জন্যে খাবার বলে দিই গে।” বলে কুমু চলে গেল । GłR মোতির মা জিজ্ঞাসা করলে, “কিছু খবর আছে বুঝি ?” “আছে। দেরি করতে পারলুম না, তোমার সঙ্গে পরামর্শ করতে এলুম। তুমি তো চলে এলে, তার পরে দাদা হঠাৎ আমার ঘরে এসে উপস্থিত। মেজাজটা খুবই খারাপ। সামান্য দামের একটা গিল্টি-করা চুরোটের ছাইদান টেবিল থেকে অদৃশ্য হয়েছে। সম্প্রতি যার অধিকারে সেটা এসেছে তিনি নিশ্চয়ই সেটাকে সোনা বলেই ঠাউরেছেন, নইলে পরকাল খোয়াতে যাবেন কোন সাধে। জান তো তুচ্ছ একটা জিনিস নড়ে গেলে দাদার বিপুল সম্পত্তির ভিতটাতে যেন নাড়া লাগে, সে তিনি সইতে পারেন না । আজ সকালে আপিসে যাবার সময় আমাকে বলে গেলেন শ্যামাকে দেশে পাঠাতে । আমি খুব উৎসাহের সঙ্গেই সেই পবিত্র কাজে লেগেছিলুম। ঠিক করেছিলুম তিনি আপিস থেকে ফেরবার আগেই কাজ সেরে রাখব। এমন সময়ে বেলা দেড়টার সময় হঠাৎ দাদা একদমে আমার ঘরে এসে ঢুকে পড়লেন। বললেন, এখনকার মতো থােক। যেই ঘর থেকে বেরোতে যাচ্ছেন, আমার ডেস্কের উপর বউরানীর সেই ছবিটি চােখে পড়ল । থমকে গেলেন । বুঝলুম আড়-চাহনিটাকে সিধে করে নিয়ে ছবিটিকে দেখতে দাদার লজ্জা বোধ হচ্ছে। বললুম, “দাদা, একটু বোসো, একটা ঢাকাই কাপড় তােমাকে দেখাতে চাই। মােতির মা'র ছােটাে ভাজের সাধ, তাই তাকে দিতে হবে। কিন্তু গণেশরাম দামে আমাকে ঠকাচ্ছে বলে বােধ হচ্ছে। তোমাকে দিয়ে সেটা একবার দেখিয়ে নিতে চাই। আমার যতটা আন্দাজ তাতে মনে হয় না তো তেরো টাকা তার দাম হতে পারে । খুব বেশি হয় তো ন-টাকা সাড়ে ন-টাকার মধ্যেই হওয়া উচিত ।” মোতির মা অবাক হয়ে বললে, “ও আবার তোমার মাথায় কোথা থেকে এল ? আমার ছোটো ভাজের সাধ হবার কোনো উপায়ই নেই। তার কোলের ছেলেটির বয়স তো সবে দেড় মাস। বানিয়ে বলতে তোমার আজকাল দেখছি কিছুই বাধে না । এই তোমার নতুন বিদ্যে পেলে কোথায় ?” “যেখান থেকে কালিদাস র্তার কবিত্ব পেয়েছেন, বাণী বীণাপাণির কাছ থেকে ।” “বীণাপাণি তোমাকে যতক্ষণ না ছাড়েন ততক্ষণ তোমাকে নিয়ে ঘর করা যে দায় হবে ।” “পণ করেছি, স্বৰ্গারোহণকালে নরকদর্শন করে যাব, বউরানীর চরণে এই আমার দান ।” “কিন্তু সাড়ে ন-টাকা দামের ঢাকাই কাপড় তখনই তখনই তোমার জুটল কোথায় ?” “কোথাও না। কুড়ি মিনিট পরে ফিরে এসে বললুম, গণেশরাম সে কাপড় আমাকে না বলেই ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। দাদার মুখ দেখে বুঝলুম, ইতিমধ্যে ছবিটা র্তার মগজের মধ্যে ঢুকে স্বপ্নের রূপ ধরেছে। কী জানি কেন, পৃথিবীতে আমারই কাছে দাদার একটু আছে চক্ষুলজ্জা, আর কারও হলে ছবিটা ধ্যা করে তুলে নিতে র্তার বাধত না ।” “তুমিও তো লোভী কম নও । দাদাকে না-হয়, সেটা দিতেই ৷” “তা দিয়েছি, কিন্তু সহজ মনে দিই নি । বললেম, দাদা, এই ছবিটা থেকে একটা অয়েলপেন্টিং করিয়ে নিয়ে তোমার শোবার ঘরে রেখে দিলে হয় না ? দাদা যেন উদাসীনভাবে বললে, আচ্ছা দেখা যাবে। বলেই ছবিটা নিয়ে উপরের ঘরে চলে গেল। তার পরে কী হল ঠিক জানি নে। বােধ করি আপিসে যাওয়া হয় নি, আর ঐ ছবিটাও ফিরে পাবার আশা রাখি নে ৷” “তোমার বউরানীর জন্যে স্বৰ্গটাই খোওয়াতে যখন রাজি আছ, তখন না-হয় একখানা ছবিই-বা Cri8869 l" * η