পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8心文 রবীন্দ্র-রচনাবলী অমিত বলে, “বিয়ে ব্যাপারটায় সকলের চেয়ে জরুরি হচ্ছে পাত্রী, তার নীচেই পাত্ৰ ।” সিসি বলে, “অবাক করলে, মেয়ে এত আছে।” অমিত বলে, “মেয়ে বিয়ে করত সেই পুরাকালে, লক্ষণ মিলিয়ে । আমি চাই পাত্রী আপন পরিচয়েই যার পরিচয়, জগতে যে অদ্বিতীয় ।” সিসি বলে, “তােমার ঘরে এলেই তুমি হবে প্রথম, সে হবে দ্বিতীয়, তােমার পরিচয়েই হবে তার পরিচয় ।” অমিত বলে, “আমি মনে মনে যে মেয়ের ব্যর্থ প্রত্যাশায় ঘটকালি করি সে গরঠিকানা মেয়ে । প্রায়ই সে ঘর পর্যন্ত এসে পৌঁছয় না । সে আকাশ থেকে পড়ন্ত তারা, হৃদয়ের বায়ুমণ্ডল ছুতে-না-ফ্লুতেই জ্বলে ওঠে, বাতাসে যায় মিলিয়ে, বাস্তুঘরের মাটি পর্যন্ত আসা ঘটেই ওঠে না।” সিসি বলে, “অর্থাৎ, সে তোমার বোনেদের মতো একটুও না।” অমিত বলে, “অর্থাৎ, সে ঘরে এসে কেবল ঘরের লোকেরই সংখ্যা বৃদ্ধি করে না।” লিসি বলে, “আচ্ছা ভাই সিসি, বিমি বোস তো আমির জন্যে পথ চেয়ে তাকিয়ে আছে, ইশারা করলেই ছুটে এসে পড়ে, তাকে ওর পছন্দ নয় কেন ? বলে, তার কালচার নেই। কেন ভাই, সে তো এম. এ. -তে বটানিতে ফারস্ট। বিদ্যেকেই তো বলে কালচার ।” অমিত বলে, “কমল-হীরের পাথরটাকেই বলে বিদ্যে, আর ওর থেকে যে আলো ঠিকরে পড়ে তাকেই বলে কালচার । পাথরের ভার আছে, আলোর আছে দীপ্তি ।” লিসি রেগে উঠে বলে, “ইস, বিমি বোসের আদর নেই। ওঁর কাছে ! উনি নিজেই নাকি তার যোগ্য ! আমি যদি বিমি বোসকে বিয়ে করতে পাগল হয়েও ওঠে। আমি তাকে সাবধান করে দেব, সে যেন ওর দিকে ফিরেও না তাকায় ।” অমিত বললে, “পাগল না হলে বিমি বােসকে বিয়ে করতে চাইবই বা কেন ? সে সময়ে আমার বিয়ের কথা না ভেবে উপযুক্ত চিকিৎসার কথা ভেবো ।” আত্মীয়সজন অমিতের বিয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছে। তারা ঠিক করেছে, বিয়ের দায়িত্ব নেবার যোগ্যতা ওর নেই, তাই ও কেবল অসম্ভবের স্বপ্ন দেখে আর উলটাে কথা বলে মানুষকে চমক লাগিয়ে বেড়ায় । ওর মনটা আলেয়ার আলো, মাঠে বাটে ধাধা লাগাতেই আছে, ঘরের মধ্যে তাকে ধরে আনবার জো নেই । ” ইতিমধ্যে অমিত যেখানে-সেখানে হাে হো করে বেড়াচ্ছে- ফিরপোর দোকানে যাকে-তাকে চা খাওয়াচ্ছে, যখন-তখন মোটরে চড়িয়ে বন্ধুদের অনাবশ্যক ঘুরিয়ে নিয়ে আসছে ; এখােন-ওখান থেকে যা-তা কিনছে আর একে-ওকে বিলিয়ে দিচ্ছে, ইংরেজি বই সদ্য কিনে এ-বাড়িতে ও-বাড়িতে ফেলে আসছে, আর ফিরিয়ে আনছে না । ওর বোনেরা ওর যে অভ্যাসটা নিয়ে ভারি বিরক্ত সে হচ্ছে ওর উলটো কথা বলা । সজনসভায় যা-কিছু সর্বজনের অনুমোদিত ও তার বিপরীত কিছু একটা বলে বসবেই। * একদা কোন একজন রাষ্ট্ৰতাত্ত্বিক ডিমোক্রাসির গুণ বৰ্ণনা করছিল ; ও বলে উঠল, “বিষ্ণু যখন সতীর মৃতদেহ খণ্ড খণ্ড করলেন তখন দেশ জুড়ে যেখানে-সেখানে তঁার একশোর অধিক পীঠস্থান তৈরি হয়ে গেল। ডিমোক্রাসি আজ যেখানে-সেখানে যত টুকরো অ্যারিস্টক্রেসির পুজো বসিয়েছে ; খুদে খুদে অ্যারিস্টক্রাটে পৃথিবী ছেয়ে গেলা- কেউ পলিটিক্সে, কেউ সাহিত্যে, কেউ সমাজে। তাদের কারও গাম্ভীৰ্য নেই, কেননা তাদের নিজের পরে বিশ্বাস নেই।” 恤 একদা মেয়েদের পরে পুরুষের আধিপত্যের অত্যাচার নিয়ে কোনো সমাজহিতৈষী অবলাবান্ধব নিন্দা করছিল পুরুষদের। অমিত মুখ থেকে সিগারেট নামিয়ে ফস করে বললে, “পুরুষ আধিপত্য ছেড়ে দিলেই মেয়ে আধিপত্য শুরু করবে। দুর্বলের আধিপত্য অতি ভয়ংকর।” সভাস্থ অবলা ও অবলাবান্ধবেরা চটে উঠে বললে, “মানে কী হল ।” অমিত বললে, “যে পক্ষের দখলে শিকল আছে সে শিকল দিয়েই পাখিকে বঁধে, অর্থাৎ জোর