পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা 8byዒ করেছ। তা নিয়ে কথা কাটাকাটি করব না। কিন্তু একটা জায়গায় তোমার ভুল আছে। মানুষের চরিত্র জিনিসটাও চলে । ঘর-পোষা অবস্থায় তার একরকম শিকলি-বাধা স্থাবর পরিচয় । তার পরে একদিন ভাগ্যের হঠাৎ এক ঘায়ে তার শিকলি কাটে, সে ছুটি দেয় অরণ্যে, তখন তার আর-এক মূর্তি ।” “আজ তুমি তার কোনটা ।” “যেটা আমার বরাবরের সঙ্গে মেলে না, সেইটে । এর আগে অনেক মেয়ের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল, সমাজের কাটা খাল বেয়ে বাধা ঘাটে রুচির ঢাকা লণ্ঠন জ্বালিয়ে । তাতে দেখাশোনা হয়, চেনাশোনা হয় না। তুমি নিজেই বলো বন্যা, তোমার সঙ্গেও কি আমার সেই আলাপ |” লাবণ্য চুপ করে রইল । কায়দাটা বেশ শোভন, নিরাপদ, সেটাতে যেন তাদের রুচির টান, মর্মের মিল নয় । হঠাৎ যদি মরণের ধাক্কা লাগে, নিবে যায় দুই তারার লণ্ঠন, দোহে এক হয়ে ওঠবার আগুন ওঠে জ্বলে । সেই আগুন জ্বলেছে, অমিত রায় বদলে গেল। মানুষের ইতিহাসটাই এইরকম । তাকে দেখে মনে হয় ধারাবাহিক, কিন্তু আসলে সে আকস্মিকের মালা গাথা।। সৃষ্টির গতি চলে সেই আকস্মিকের ধাক্কায় ধাক্কায় দমকে দমকে, যুগের পর যুগ এগিয়ে যায় বঁপতালের লয়ে । তুমি আমার তাল বদলিয়ে দিয়েছ বন্যা, সেই তালেই তো তোমার সুরে আমার সুরে গাথা পড়ল ।” লাবণ্যর চোখের পাতা ভিজে এল । তবু এ কথা মনে না করে থাকতে পারলে না যে, অমিতার মনের গড়নটা সাহিত্যিক, প্রত্যেক অভিজ্ঞতায় ওর মুখে কথার উচ্ছাস তোলে। সেইটো ওর জীবনের ফসল, তাতেই ও পায় আনন্দ । আমাকে ওর প্রয়োজন সেইজন্যেই । যে-সব কথা ওর মনে বরফ হয়ে জমে আছে, ও নিজে যার ভার বোধ করে। কিন্তু আওয়াজ পায় না, আমার উত্তাপ লাগিয়ে তাকে দুজনে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থেকে লাবণ্য হঠাৎ এক সময়ে প্রশ্ন করলে, “আচ্ছা মিতা, তুমি কি মনে কর না, যেদিন তাজমহল তৈরি শেষ হল সেদিন মমতাজের মৃত্যুর জন্যে শাজাহান খুশি হয়েছিলেন। তার স্বপ্নকে অমর করবার জন্যে এই মৃত্যুর দরকার ছিল। এই মৃত্যুই মমতাজের সব চেয়ে বড়ো প্রেমের দান । তাজমহলে শাজাহানের শোক প্রকাশ পায় নি, তার আনন্দ রূপ ধরেছে।” অমিত বললে, “তোমার কথায় তুমি ক্ষণে ক্ষণে আমাকে চমক লাগিয়ে দিচ্ছি। তুমি নিশ্চয়ই কবি।” “আমি চাই নে কবি হতে ।” '6कe bi९3 क्र ।' “জীবনের উত্তাপে কেবল কথার প্রদীপ জ্বালাতে আমার মন যায় না । জগতে যারা উৎসবসভা সাজাবার হুকুম পেয়েছে কথা তাদের পক্ষেই ভালো। আমার জীবনের তাপ জীবনের কাজের “বন্যা, তুমি কথাকে অস্বীকার করছ? জান না, তোমার কথা আমাকে কেমন করে জাগিয়ে দেয়। তুমি কী করে জানবে তুমি কী বল, আর সে বলার কী অর্থ। আবার দেখছি নিবারণ চক্রবতীকে ডাকতে হল । ওর নাম শুনে শুনে তুমি বিরক্ত হয়ে গেছ। কিন্তু কী করব বলে, ঐ লোকটা আমার মনের কথার ভাণ্ডারী । নিবারণ এখনো নিজের কাছে নিজে পুরোনো হয়ে যায় নি ; ও প্রত্যেক বারেই যে কবিতা লেখে সে ওর প্রথম কবিতা । সেদিন ওর খাতা ঘাটতে ঘাটতে অল্পদিন আগেকার একটা লেখা পাওয়া গেল । ঝরনার উপরে কবিতা- কী করে খবর পেয়েছে শিলঙ পাহাড়ে এসে আমার ঝরনা আমি খুঁজে পেয়েছি। ও লিখছে ፥፡ “ঝরনা, তোমার স্ফটিক জলের 牙区 &阿一 তাহারি মাঝারে দেখে আপনারে সূর্য তারা।