পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qの8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সুন্দরী ওগো শুকতারা, রাত্রি না যেতে এসো তুর্ণ। স্বপ্নে যে বাণী হল হারা জাগরণে করো তারে পূর্ণ। উদ্ধারের আশা আছে, কানে আসছে জাগ্ৰত বিশ্বের বিপুল কলরব, সেই মহাপথের দূতী তার প্রদীপ হাতে করে এল বলে নিশীথের তল হতে তুলি লাহাে তারে প্রভাতের জন্য । जैाथाद्ध निरङाद्र श्लि ठूलि, আলোকে তাহারে করো ধন্য । যেখানে সুপ্তি হল। লীনা, যেথা বিশ্বের মহামন্দ্ৰ, অর্পিনু সেথা মোর বীণা আমি আধো-জাগ্ৰত চন্দ্ৰ । এই হতভাগা চাদটা তো আমি। কাল সকালবেলা চলে যাব। কিন্তু চলে যাওয়াকে তো শূন্য রাখতে চাই নে। তার উপরে আবির্ভাব হবে সুন্দরী শুকতারার, জাগরণের গান নিয়ে। অন্ধকার জীবনের স্বপ্নে এতদিন যা অস্পষ্ট ছিল, সুন্দরী শুকতারা তাকে প্রভাতের মধ্যে সম্পূর্ণ করে দেবে। এর মধ্যে একটা আশার জোর আছে, ভাবী প্ৰত্যুষের একটা উজ্জ্বল গীেরব আছে। তোমার ঐ রবি ঠাকুরের কবিতার মতো মিইয়ে-পড়া হাল-ছাড়া বিলাপ নয়।” । রাগ কর কেন মত। বৰঠাকুর যা পারে তার বেশি সে পারেন, একথা বারবার বলে লন্ড " “তোমরা সবাই মিলে তাকে নিয়ে বড়ো বেশি-” “ও কথা বােলো না মিতা। আমার ভালো-লাগা আমারই, তাতে যদি আর-কারও সঙ্গে আমার মিল হয় বা তোমার সঙ্গে মিল না হয়, সেটাতে কি আমার দোষ । নাহয় কথা রইল, তোমার সেই পঁচাত্তর টাকার বাসায় একদিন আমার যদি জায়গা হয় তা হলে তোমার কবির লেখা আমাকে শুনিয়ো, আমার কবির লেখা তােমাকে শোনাব না।” । দুটা অনায় হল বে। পরস্পর পরস্পরের জুলুম আৰু পেতে ব্ৰহ্ন করবে, এইজনেই তাে " “রুচির জুলুম তােমার কিছুতেই সইবে না। রুচির ভোজে তােমরা নিমন্ত্রিত ছাড়া কাউকে ঘরে ঢুকতে দাও না, আমি অতিথিকেও আদর করে বসাই।” “ভালো করলুম না তর্ক তুলে। আমাদের এখানকার এই শেষ সন্ধেবেলার সুর বিগড়ে গেল।” “একটুও না যা-কিছু বলবার আছে সব স্পষ্ট করে বলেও যে সুরাটা খাটি থাকে সেই আমাদের সুর । তার মধ্যে ক্ষমার অন্ত নেই।” “আজ আমার মুখের বিস্বাদ ঘোচাতেই হবে। কিন্তু বাংলা কাব্যে হবে না। ইংরেজি কাব্যে আমার বিচারবুদ্ধি অনেকটা ঠাণ্ডা থাকে। প্রথম-দেশে ফিরে এসে আমিও কিছুদিন প্রোফেসারি করেছিলুম।” লাবণ্য হেসে বললে, “আমাদের বিচারবুদ্ধি ইংরেজ-বাড়ির বুলডগের মতো- ধুতির কোচাটা দুলছে দেখলেই ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। ধুতির মহলে কোনটা ভদ্র ও তার হিসেব পায় না। বরঞ্চ খানসামার তকমা দেখলে লেজ নাড়ে ।” “তা মানতেই হবে । পক্ষপাত-জিনিসটা স্বাভাবিক জিনিস নয় । অধিকাংশ স্থলেই ওটা ফরমাশে তৈরি । ইংরেজি সাহিত্যে পক্ষপাত কান-মলা খেয়ে খেয়ে ছেলেবেলা থেকে অভ্যোস হয়ে গেছে । সেই অভ্যেসের জোরেই এক পক্ষকে মন্দ বলতে যেমন সাহস হয় না, অন্য পক্ষকে ভালো বলতেও