পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা GS “কেটির বড়ো বড়ো চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠল ; বললে, “হতেই হবে ফল ।” আরো খানিকটা সময় গেল। সিসি আবার বললে, “চলো ভাই, আর একটুও থাকতে ইচ্ছে করছে at ” কেটি বারাণ্ডায় ধন্না দিয়ে বসে রইল। বললে, “এইখন দিয়ে তাকে বেরোতেই তো হবে ।” অবশেষে বেরিয়ে এল অমিত, সঙ্গে নিয়ে এল লাবণ্যকে । লাবণ্যর মুখে একটি নির্লিপ্ত শান্তি । তাতে একটুও রাগ নেই, স্পর্ধা নেই, অভিমান নেই। যোগমায়া পিছনের ঘরেই ছিলেন, তার বেরোবার ইচ্ছা ছিল না। অমিত র্তাকে ধরে নিয়ে এল। এক মুহুর্তের মধ্যেই কেটির চােখে পড়ল, লাবণ্যর হাতে আংটি। মাথায় রক্ত চনা করে উঠল, লাল হয়ে উঠল দুই চােখ, পৃথিবীটাকে লাথি মারতে ইচ্ছে করল । . অমিত বললে, “মাসি, এই আমার বোন শমিতা, বাবা বোধ হয় আমার নামের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে নাম রেখেছিলেন, কিন্তু রয়ে গেল অমিত্ৰাক্ষর । ইনি কেতকী, আমার বোনের বন্ধু।” ইতিমধ্যে আর-এক উপদ্রব । সুরমার এক পোষা বিড়াল ঘর থেকে বেরিয়ে আসাতেই ট্যাবির কুকুরীয় নীতিতে সে এই স্পর্ধটাকে যুদ্ধঘোষণার বৈধ কারণ বলেই গণ্য করলে। একবার অগ্রসর হয়ে তাকে ভৎসনা করে, আবার বিড়ালের উদ্যত নখর ও ফোসফোসানিতে যুদ্ধের আশু ফল সম্বন্ধে সংশয়াপন্ন হয়ে ফিরে আসে। এমন অবস্থায় কিঞ্চিৎ দূর হতেই অহিংস্রগর্জননীতিই নিরাপদ বীরত্ব । প্রকাশের উপায় মনে করে অপরিমিত চিৎকার শুরু করে দিলে। বিড়ালটা তার কোনো প্ৰতিবাদ না করে পিঠ ফুলিয়ে চলে গেল। এইবার কেটি সহ্য করতে পারলে না। প্রবল আক্ৰোশে কুকুরটাকে কান-মলা দিতে লাগল। এই কান-মলার অনেকটা অংশই নিজের ভাগ্যের উদ্দেশ্যে। কুকুরটা কেঁই কেঁই স্বরে অসদব্যবহার সম্বন্ধে তীব্র অভিমত জানালে। ভাগ্য নিঃশব্দে হাসল। এই গোলমালটা একটু থামলে পর অমিত সিসিকে লক্ষ্য করে বললে, “সিসি, ঐরই নাম লাবণ্য । আমার কাছ থেকে এর নাম কখনো শোন নি, কিন্তু বোধ হচ্ছে আর দশজনের কাছ থেকে শুনেছ।। এর সঙ্গে আমার বিবাহ স্থির হয়ে গেছে, কলকাতায় আত্মান মাসে ।” ” কেটি মুখে হাসি টেনে আনতে দেরি করলে না। বললে, “আই কনগ্র্যাচুলেট । কমললেবুর মধু পেতে বিশেষ বাধা হয় নি বলেই ঠেকছে। রাস্ত কঠিন নয়, মধু লাফ দিয়ে আপনিই এগিয়ে এসেছে মুখের কাছে।” সিসি তার স্বাভাবিক অভ্যাসমত হী হী করে হেসে উঠল । -السي লাবণ্য বুঝলে, কথাটায় খোচা আছে, কিন্তু মানেটা সম্পূর্ণ বুঝলে না। অমিত তাকে বললে, “আজ বেরোবার সময় এরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কোথায় যােচ্ছ । আমি বলেছিলুম, বন্য মধুর সন্ধানে। তাই এরা হাসছে। ওটা আমারই দোষ ; আমার কোন কথাটা যে হাসির নয় লোকে সেটা ঠাওরাতে পারে না ।” কেটি শান্ত স্বরেই বললে, “কমললেবুর মধু নিয়ে তোমার তো জিত হল, এবার আমারও যাতে । হার না হয় সেটা করো ।” । “কী করতে হবে বলে ।” “নরেনের সঙ্গে আমার একটা বাজি আছে। সে বলেছিল, জেন্টেলম্যানরা যেখানে যায় কেউ সেখানে তোমাকে নিয়ে যেতে পারে না, কিছুতেই তুমি রেস দেখতে যাবে না। আমি আমার এই হীরের আংটি বাজি রেখে বলেছিলুম, তোমাকে রেসে নিয়ে যাবই। এ দেশে যত ঝরনা, যত মধুর দোকান আছে সব সন্ধান করে শেষকালে এখানে এসে তোমার দেখা পেলুম। বলো-না ভাই সিসি, কত ফিরতে হয়েছে বুনো হাঁস শিকারের চেষ্টায়, ইংরেজিতে যাকে বলে wild goose ” সিসি কোনো কথা না বলে হাসতে লাগল। কেটি বললে, “মনে পড়ছে। সেই গল্পটা- একদিন তোমার কাছেই শুনেছি। আমিট । কোনো পার্শিয়ান ফিলজফার তার পাগড়ি-চোরের সন্ধান না পেয়ে শেষে গোরস্থানে এসে বসে ছিল । বলেছিল, পালাবে কোথায় । মিস লাবণ্য যখন বলেছিলেন ওকে