পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা &SS) সেটাকে তোমার কথা বলে বুঝতে গেলেই ভুল বুঝবে, আমাকে গাল দিয়ে বসবে। একের কথার উপর আরের মানে চাপিয়েই পৃথিবীতে মারামারি খুনোখুনি হয়। এবার আমার নিজের কথাটা স্পষ্ট করেই না-হয় তোমাকে বলি । রূপক দিয়েই বলতে হবে, নইলে এ-সব কথার রূপ চলে যায়কথাগুলো লজ্জিত হয়ে ওঠে । কেতকীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ভালোবাসারই, কিন্তু সে যেন ঘড়ায়-তোলা জল- প্রতিদিন তুলব, প্রতিদিন ব্যবহার করব। আর লাবণ্যর সঙ্গে আমার যে ভালোবাসা সে রইল দিঘি, সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাতার দেবে ।” : যতি একটু কুষ্ঠিত হয়ে বললে, “কিন্তু অমিতদা, দুটাের মধ্যে একটাকেই কি বেছে নিতে হয় না।” “যারা হয় তারই হয়, আমার হয় না ।” “কিন্তু শ্ৰীমতী কেতকী যদি-” “তিনি সব জানেন । সম্পূর্ণ বোঝেন কি না বলতে পারি নে। কিন্তু সমস্ত জীবন দিয়ে এইটেই ভুল বােঝােব যে, ঠাকে কোথাও ফাকি দিচ্ছি নে । এও তাকে বুঝতে হবে যে, লাবণ্যর কাছে তিনি ঋণী ।” “তা হােক, শ্ৰীমতী লাবণ্যকে তো তোমার বিয়ের খবর জানাতে হবে ।” “নিশ্চয় জানাব। কিন্তু তার আগে একটি চিঠি দিতে চাই, সেটি তুমি পৌঁছিয়ে দেবে ?” দেব | অমিতার এই চিঠি : সেদিন সন্ধেবেলায় রাস্তার শেষে এসে যখন দাঁড়ালুম, কবিতা দিয়ে যাত্রা শেষ করেছি। আজও এসে থামালুম একটা রাস্তার শেষে । এই শেষমূহুর্তটির উপর একটি কবিতা রেখে যেতে চাই। আর কোনো কথার ভার সইবে না । হতভাগা নিবারণ চক্রবর্তীটা যেদিন ধরা পড়েছে সেইদিন মরেছে- অতি শৌখিন জলচর মাছের মতো। তাই উপায় না দেখে তোমারই কবির উপর ভার দিলুম আমার শেষ কথাটা তোমাকে জানাবার জন্যে । তব অন্তর্ধানপটে হেরি তব রূপ চিরন্তন । । অন্তরে অলক্ষ্যলোকে তোমার অন্তিম আগমন । লভিয়াছি চিরস্পর্শমণি ; আমার শূন্যতা তুমি পূর্ণ করি গিয়েছ আপনি । জীবন আঁধার হল, সেই ক্ষণে পাইনুসন্ধান সন্ধ্যার দেউলদীপ চিত্তের মন্দিরে তব দান । বিচ্ছেদের হোমবহি হতে পূজামূর্তি ধৰি প্রেম দেখা দিল দুঃখের আলােতে, তার পরেও আরো কিছুকাল গেল। সেদিন কেতকী গেছে তার বোনের মেয়ের অন্নপ্রাশনে । অমিত গেল না। আরামকেদারায় বসে সামনের চৌকিতে পা-দুটাে তুলে দিয়ে উইলিয়ম জেমসের পত্রাবলী পড়ছে। এমন সময় যতিশংকর লাবণ্যর লেখা এক চিঠি তার হাতে দিলে । চিঠির এক পাতে শোভনলালের সঙ্গে লাবণ্যর বিবাহের খবর। বিবাহ হবে ছমাস পরে, জ্যৈষ্ঠমাসে, রামগড়পর্বতের শিখরে । অপর পাতে ; কালের যাত্রার ধবনি শুনিতে কি পাও । তারি রথ নিত্যই উধাও , , জাগাইছে। অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন, চক্ৰে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষফাটা তারার ক্ৰন্দন । GN8