পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য @8@ করিলে তাহার অনেক রস বৃথা নষ্ট হইয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে "সারদামঙ্গল একটি সমগ্র কাব্য নহে, তাহাকে কতকগুলি খণ্ড কবিতার সমষ্টিরূপে দেখিলে তাহার অর্থবোধ হইতে কষ্ট হয় না । দ্বিতীয়ত, সরস্বতী সম্বন্ধে সাধারণত পাঠকের মনে যেরূপ ধারণা আছে কবির সরস্বতী তাহা হইতে স্বতন্ত্র । কবি যে-সরস্বতীর বন্দনা করিতেছেন। তিনি নানা আকারে নানা ভাবে নানা লোকের নিকট উদিত হন । তিনি কখনো জননী, কখনো প্ৰেয়সী, কখনো কন্যা । তিনি সৌন্দর্যরূপে জগতের অভ্যন্তরে বিরাজ করিতেছেন এবং দয়া-স্নেহ-প্ৰেমে মানবের চিত্তকে অহরহ বিচলিত করিতেছেন। ইংরেজ কবি শেলি যে বিশ্বব্যাপিনী সৌন্দর্যলক্ষ্মীকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন Spirit of Beauty, that dost consecrate With thine own hues all thou dost shine upon Of human thought or form. যাহাকে বলিয়াছেন Thou messenger of sympathies, That wax and wane in lover's eyes. সেই দেবীই বিহারীলালের সরস্বতী । "সারদামঙ্গলের আরম্ভের চারি শ্লোকে কবি সেই সারদা দেবীকে মূর্তিমতী করিয়া বন্দনা করিয়াছেন । তৎপরে, বাল্মীকির তপোবনে সেই করুণারাপিণী দেবীর কিরূপে আবির্ভাব হইল, কবি তাহা বৰ্ণনা করিতেছেন। পাঠকের নেত্রসম্মুখে দৃশ্যপট যখন উঠিল তখন তপোবনে অন্ধকার রাত্রি । “নাহি চন্দ্ৰ সূৰ্য তারা অনল-হিল্লোল-ধারা বিচিত্ৰ-বিদ্যুৎ-দামি-দাতি ঝলমল । তিমিরে নিমগ্ন ভব, নীরব নিস্তব্ধ সব, কেবল মরুতরাশি করে কোলাহল ।” এমন সময়ে উষার উদয় হইল - * “হিমাদ্রিশিখর-’পরে আচম্বিতে আলো করে অপরূপ জ্যোতি ওই পুণ্য-তপোবন। বিকচ নয়নে চেয়ে হাসিছে দুধের মেয়েতামসী-তরুণ-উষা কুমারীরতন । কিরণে ভুবন ভরা, হাসিয়ে জাগিল ধরা, হাসিয়ে জাগিল শূন্যে দিগঙ্গানাগণ । হাসিল অম্বরতলে পারিজাত দলে দলে, ” হাসিল মানসসরে কমলাকানন ।” তপোবনে এক দিকে যেমন তিমির রাত্রি ভেদ করিয়া তরুণ উষার অভ্যুদয় হইল তেমনি অপর দিকে নিষ্ঠুর হিংসাকে বিদীর্ণ করিয়া কিরূপে করুণাময় কাব্যজ্যোতি প্রকাশ পাইল কবি তাহার বর্ণনা