পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(two রবীন্দ্র রচনাবলী উপরিভাগ চক্ষে পড়ে। ঢেউ খেলিতেছে ; ফেন উচ্ছসিত হইয়া উঠিতেছে, মেঘের ছায়া পড়িতেছে ; সূর্যের আলোক শত শত অংশে প্রতিস্ফুরিত হইয়া চতুদিকে বিক্ষিপ্ত হইতেছে ; তরঙ্গে তরঙ্গে স্পর্শ ং পলায়ন, কলরব, কলহাস্য, করতালি ; কেবল নৃত্য এবং গীত, আভাস এবং আন্দোলন, আলোক এবং বর্ণবৈচিত্ৰ্য। এই নবীন চঞ্চল প্রেমহিল্লালের উপর সৌন্দর্য যে কত ছন্দে কত ভঙ্গিতে বিছুরিত হইয়া উঠে, বিদ্যাপতির গানে তাহাই প্রকাশ পাইয়াছে। কিন্তু সমুদ্রের অন্তর্দেশে যে গভীরতা, নিস্তব্ধতা, যে বিশ্ববিস্মৃত ধ্যানলীনতা আছে তাহা বিদ্যাপতির গীতি-তরঙ্গের মধ্যে পাওয়া যায় না। কদাচ কখনো দেখা হয়, যমুনার জলে অথবা স্নান করিয়া ফিরিবার সময় । কিন্তু ভালো করিয়া দেখা হয় না । একে অল্পক্ষণের দেখা, তাহাতে অধৈৰ্যচঞ্চল দোদুল্যমান হৃদয়ে সৌন্দর্যের যে প্রতিবিম্ব পড়ে তাহা ভাঙিয়া ভাঙিয়া যায়- মনকে শাস্ত করিয়া ধৈর্য ধরিয়া দেখিবার অবসর পাওয়া যায় নাযেটুকু দেখা গেল সে কেবল “আধ উমাচর খসি। আধি বদনে হসি, আধা হি নয়ান তরঙ্গ ।” fPV “ভাল করি পেখন না ভেল |’ তাহার পর কত আসা-যাওয়া, কত বলা-কওয়া, কত ছলে কত ভাব প্ৰকাশ, কত ভয়, কত ভাবনা- অবশেষে একদিন মধুর বসন্তে নবীন মিলন ; কিন্তু তাহাও নিবিড় নিগৃঢ় নিরতিশয় মিলন নহে । তাহার মধ্যে কত আশঙ্কা, কত আশ্বাস, কত কীেতুক, কত ছদ্মলীলা, কত মান-অভিমান সাধ্যসাধনা ! আবার সখীর সহিত পরামর্শ ; সখীকে ডাকিয়া গৃহকোণে নিভৃতে বসিয়া নানা ছলে এবং কথার কৌশলে আপনার সুখস্মৃতি লইয়া আলোচনা। নবীনার নবপ্রেম যেমন মুগ্ধ যেমন মিশ্ৰিত বিচিত্র কৌতুককৌতুহলপরিপূর্ণ হইয়া থাকে, ইহাতে তাহার কিছুই কম নাই। - চণ্ডীদাস গভীর এবং ব্যাকুল, বিদ্যাপতি নবীন এবং মধুর। ইহার সহিত আর-একটি গীত যোগ না করিলে ইহা সম্পূর্ণ হয় না। ‘মধু ঋতু, মধুকরপাতি ; মধুর-কুসুম-মধু-মাতি । মধুর বৃন্দাবনমাঝ, মধুর মধুর রসরাজ।