পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য @心为 মধুর-যুবতীগণ-সঙ্গ মধুর মধুর রসরঙ্গ । মধুর যন্ত্র সুরসাল, মধুর মধুর করতাল । মধুর নটন-গতিভঙ্গ, মধুর নটিনী-নট-রঙ্গ । মধুর মধুর রসগান, মধুর বিদ্যাপতি ভান ।” এইখানেই শেষ করা যাইত । কিন্তু এখানে শেষ করিলে বড়ো অসমাপ্ত থাকে । ঠিক সমে আসিয়া থামে না । এইজন্য বিদ্যাপতি একটি শেষ কথা বলিয়া রাখিয়াছেন । তাহাকে শেষ কথা বলা যাইতে পারে অশেষ কথাও বলা যাইতে পারে ; এত লীলাখেলা নব নব রসোল্লাসের পরিণাম-কথা এই যে “জনম অবধি হাম রূপ নেহারিনু নয়ন না তিরপিত ভেল । লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখানু তবু হিয়ে জুড়ন না গেল।” নবীন প্ৰেম একেবারে লক্ষ লক্ষ যুগের পুরাতন হইয়া গেল। ইহার পরে ছন্দ এবং রাগিণী পরিবর্তন করা আবশ্যক। চিরনবীন প্রেমের ভূমিকা সমাপ্ত হইয়াছে। চণ্ডীদাস আসিয়া চিরপুরাতন প্রেমের গান আরম্ভ করিয়া দিলেন । CD& Y R&br কৃষ্ণচরিত্র প্রথম ইংরাজি শিক্ষা পাইয়া আমরা যখন রাজনীতির সমালোচনা আরম্ভ করিয়া দিলাম, সমাজনীতি এবং ধর্মনীতিও সেই নিষ্ঠুর পরীক্ষার হস্ত হইতে নিস্কৃতি প্রাপ্ত হয় নাই। তখন ছাত্রমাত্রেরই মনে । আমাদের সমাজ ও ধর্ম সম্বন্ধে একটা অসন্তোষ ও সংশয়ের উদ্ৰেক হইয়াছিল । বিচারের পর কাজের পালা । মতের দ্বারা ভালোমন্দ স্থির করা কঠিন নহে, কিন্তু কাৰ্যক্ষেত্রে তদনুসারে আপনি কর্তব্য নিয়মিত করা অত্যন্ত দুরূহ। রাজ্যতন্ত্র সম্বন্ধে আমাদের নিজের কর্তব্য অতি যৎসামান্য ; কারণ, রাজত্বের অধিকার আমাদের হস্তে কিছুই নাই। এইজন্য পোলিটিকাল সমালোচনা এখনো অত্যন্ত তীব্র ও প্রবল ভাবেই চলিতেছে, তৎসম্বন্ধে কোনােপ্রকার দ্বিধা অথবা বাধা অনুভব করিবার কোনাে কারণ ঘটে নাই। কিন্তু সমাজ ও ধর্ম -সম্বন্ধীয় কর্তব্য আমাদের নিজের হাতে ; অতএব ধর্ম ও সমাজনীতি সম্বন্ধে বিচারে যাহা স্থির হয় কাজে তাহার প্রয়োগ না হইলে সেজন্য আপনাকে ছাড়া আর কাহাকেও দোষী করা যায় না। মানুষ বেশিক্ষণ আপনাকে দোষী করিয়া বসিয়া থাকিতে পারে না ; এবং নিজের প্রতি দোষারোপ করিয়া অমানবদনে বসিয়া থাকাও তাহার পক্ষে মঙ্গলজনক নহে। এইজন্য সমাজ ও ধর্ম সম্বন্ধে এক-একটি কৈফিয়ত বাহির করিয়া আমরা মনকে সাস্তুনা দিতে আরম্ভ করিলাম ; অবশেষে এমন হইল যে, আমাদের যাহা-কিছু আছে তাহাই সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ ইহা আমরা কিছু অধিক উচ্চস্বরে এবং প্রাণপণ বল-সহকারে ঘোষণা করিতে প্ৰবৃত্ত হইলাম । ” এরাপ ব্যবহার যে কপট ও কৃত্রিম আমি তাহা বলি না। বস্তুত, সমাজ ও ধর্মের মূল জাতীয় প্রকৃতির এমন গভীরতম দেশে অনুপ্রবিষ্ট যে, তাহাতে হস্তক্ষেপ করিতে গেলে নানা দিক হইতে নানা গুরুতর বাধা আসিয়া পড়ে এবং পুরাতন অমঙ্গলের স্থলে নূতন অমঙ্গল মাথা তুলিয়া দাঁড়ায়। এমন স্থলে শঙ্কিতচিত্তে পুনরায় নিশ্চেষ্টতা অবলম্বন করিতে প্রবৃত্তি হয় এবং সেই নিশ্চেষ্টতার পথে