পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য ¢brዔ হইয়াছে। এই লেখাগুলির মধ্যে যে সুনিপুণ হাস্য ও সুতীক্ষ বিদ্যুপ আছে তাহা শাণিত সংযত ছন্দের মধ্যে সর্বত্র ঝকঝাক করিতেছে। প্রতিভার প্রথম উদ্দাম চেষ্টা, আরম্ভেই একটা নূতন পথের দিকে ধাবিত হয়, তাহার পর পরিণতিসহকারে পুরাতন বন্ধনের মধ্যে ধরা দিয়া আপন মর্মগত নূতনত্বকে বহিঃস্থিত পুরাতনের উপর দ্বিগুণতর উজ্জ্বল আকারে পরিস্ফুট করিয়া তুলে। ‘আষাঢ়োর গ্রন্থকর্তা যতগুলি কবিতা লিখিয়াছেন, সকলেরই মধ্যে তাহার প্রতিভার স্বকীয়ত্ব প্রকাশ পাইতেছে, কিন্তু যে কবিতাগুলি তিনি ছন্দের পুরাতন ছাঁচের মধ্যে ঢালিয়াছেন, তাহাদের মধ্যে নূতনত্বের উজ্জ্বলতা ও পুরাতনের স্থায়িত্ব উভয়ই একত্র সম্মিলিত হইয়াছে । আমাদের বিশ্বাস, কবিও তাহা অন্তরের মধ্যে উপলব্ধি করিয়াছেন এবং তাহার দুষ্ট নীহারিকা ক্ৰমে ছন্দোবন্ধে ঘনীভূত হইয়া বঙ্গসাহিত্যে হাসালােকের ধ্রুব নক্ষত্রপুঞ্জ রচনা শুদ্ধমাত্র অমিশ্র হাস্য ফেনরাশির মতাে লঘু এবং অগভীর। তাহা বিষয়পুঞ্জের উপরিতলের অস্থায়ী উজ্জ্বল বর্ণপাত মাত্র । কেবল সেই হাস্যরসের দ্বারা কেহ যথার্থ আমরতা লাভ করে না । রুপালির পাতের মধ্যে শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা আছে বটে, কিন্তু তাহার লঘুত্ব ও অগভীরতা -বশত তাহার মূল্যও অল্প এবং তাহার স্থায়িত্বও সামান্য । সেই উজ্জ্বলতার সঙ্গে রৌপ্যপণ্ডের কাঠিন্য ও ভার থাকিলে তবেই তাহার মূল্য বৃদ্ধি করে। হাস্যরসের সঙ্গে চিন্তা এবং ভাবের ভার থাকিলে তবে তাহার স্থায়ী আদর হয়। সমালোচ্য গ্রন্থে ‘বাঙালি মহিমা’, ‘কৰ্ণবিমৰ্দনকাহিনী’ প্রভৃতি কবিতায় যে হাস্য প্রকাশ পাইতেছে, তাহা লঘু হাস্য মাত্র নহে, তাহার মধ্যে কবির হৃদয় রহিয়াছে, তাহার মধ্য হইতে জ্বালা ও দীপ্তি ফুটিয়া উঠিতেছে। কাপুরুষতার প্রতি যথোচিত ঘূণা এবং ধিক্কারের দ্বারা তাহা গৌরববিশিষ্ট । তাহা ছাড়া, সাময়িক পত্রে মধ্যে মধ্যে ‘আষাঢ়ে'-রচয়িতার এমন-সকল কবিতা বাহির হইয়াছে যাহাতে হাস্য এবং অশ্রুরেখা, কৌতুক এবং কল্পনা, উপরিতলের ফেনপুঞ্জ এবং নিম্নতলের গভীরতা একত্ৰ প্ৰকাশ পাইয়াছে। তাহাই তাহার কবিত্বের যথার্থ পরিচয় । তিনি যে কেবল বাঙালিকে হাসাইবার জন্য আসেন নাই, সেইসঙ্গে তাহাদিগকে যে ভাবাইবেন এবং মাতাইবেন এমন আশ্বাস দিয়াছেন । V533RRI6 \boGt মন্দ্ৰ "মন্দ্ৰ শ্ৰীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নূতন প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। এই গ্ৰন্থখানিকে আমরা সাহিত্যের আসরে সাদর অভিবাদনের সঙ্গে আহবান করিয়া আনিব- ইহাকে আমরা মুহুর্তমাত্র দ্বারের কাছে দাড় করাইয়া রাখিতে পারিব না । - গ্রন্থ-সমালোচনা সম্পাদকের কর্তব্য বলিয়াই গণ্য। অনেকেই অতিমাত্র আগ্রহের সঙ্গেই এ কর্তব্য পালন করিতে অগ্রসর হন। কিন্তু আমাদের এ সম্বন্ধে ব্যগ্রতার যথেষ্ট অভাব আছে, সে কথা স্বীকার করি । --- "মন্দ্র’ কাব্যখনিকে অবলম্বন করিয়া আমরা অকস্মাৎ কর্তব্য পালন করিতে আসি নাই। গ্ৰন্থ পাঠ করিয়া যে আনন্দ পাইয়াছি, তাহাই প্রকাশ করিবার জন্য আমাদের এই উদ্যম । "মন্দ্র’ কাব্যখনি বাংলার কাব্যসাহিত্যকে অপরূপ বৈচিত্ৰ্য দান করিয়াছে। ইহা নূতনতায় ঝলমল করিতেছে এবং এই কাব্যে যে ক্ষমতা প্রকাশ পাইয়াছে, তাহা অবলীলাকৃত ও তাহার মধ্যে সর্বত্রই প্রবল, আত্মবিশ্বাসের একটি অবাধ সাহস বিরাজ করিতেছে। সে সাহস কী শব্দনির্বাচনে, কী ছন্দোরচনায়, কী ভাববিন্যাসে সর্বত্র অক্ষুব্ধ । সে সাহস আমাদিগকে বারংবার চকিত করিয়া তুলিয়াছে— আমাদের মনকে শেষ পর্যন্ত তরঙ্গিত করিয়া রাখিয়ছে। (ler