পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমূহ ዓ oዓ বিরক্ত হইয়া নিজের উপরেই তাহার প্রতিশোধ তুলিব ? ইহা তো কাজের প্রণালী নহে। বিরোধমাত্রই একটা শক্তির ব্যয় ; অনাবশ্যক বিরোধ অপব্যয় । দেশের হিতব্ৰতে র্যাহারা কর্মযোগী, অত্যাবশ্যক কণ্টকক্ষত র্তাহাদিগকে পদে পদে সহ্য করিতেই হইবে ; কিন্তু শক্তির ঔদ্ধত্য প্ৰকাশ করিবার জন্য স্বদেশের যাত্রাপথে নিজের চেষ্টায় কাটার চাষ করা কি দেশহিতৈষিতা । আমরা এই-যে বিদেশীবর্জন ব্রত গ্ৰহণ করিয়াছি, ইহারই দুঃখ তো আমাদের পক্ষে সামান্য নহে। স্বয়ং য়ুরোপেই ধনী আপন ধনবৃদ্ধির পথ অব্যাহত রাখিবার জন্য শ্রমীকে কিরাপ নাগপাশে বেষ্টন করিয়া ফেলিতেছে এবং তােহা লইয়া সেখানে কতই কঠিন আঘাতপ্রতিঘাত চলিতেছে। আমাদের দেশে সেই ধনী শুধু-ধনী নন, জেলের দারোগা ; লিভারপুলের নিমক খাইয়া থাকে। অতএব এ দেশের যে ধন লইয়া পৃথিবীতে র্তাহারা ঐশ্বর্যের চূড়ায় উঠিয়াছেন সেই ধনের রাস্তায় আমরা একটা সামান্য বাধা দিলেও তাহারা তো আমাদিগকে সহজে ছাড়িবেন না। এমন অবস্থায় যে সংঘাত আমাদের সম্মুখে রহিয়াছে তাহা খেলা নহে ; তাহাতে আরাম-বিশ্রামের অবকাশ নাই, তাহাতে আমাদের সমস্ত শক্তি ও সহিষ্ণুতার প্রয়োজন আছে। ইহার উপরেও র্যাহারা অনাহুত ঔদ্ধত্য ও কি দেশের কাছে অপরাধী নহেন। কাজের কঠোরতাকে সম্পূর্ণ গ্রহণ করিব, কিছুতেই পরাভব স্বীকার করিব না, দেশের শিল্পবাণিজ্যকে স্বাধীন করিয়া নিজের শক্তি অনুভব করিব, দেশের বিদ্যাশিক্ষাকে স্বায়ত্ত করিব, সমাজকে দেশের কর্তব্যসাধনের উপযোগী বলিষ্ঠ করিয়া তুলিব- ইহা করিতে গেলে ঘরে পরে দুঃখ ও বাধার অবধি থাকিবে না— সেজন্য অপরাজিতচিত্তে প্ৰস্তুত হইব ; কিন্তু বিরোধকে বিলাসের সামগ্ৰী করিয়া তুলিব না । দেশের কােজ নেশার কাজ নাহে ; তাহা সংযমীর দ্বারা, যোগীর দ্বারাই সাধ্য । - মনে করিবেন না, ভয় বা সংকোচ -বশত আমি এ কথা বলিতেছি । দুঃখকে আমি জানি, দুঃখকে আমি মানি ; দুঃখ দেবতারই প্ৰকাশ। সেইজন্যই ইহার সম্বন্ধে কোনো চাপল্য শোভা পায় না। দুঃখ দুর্বলকেই হয় স্পর্ধায় নয় অভিভূতিতে লইয়া যায় ! প্রচণ্ডতাকেই যদি প্রবলতা বলিয়া জানি, কলহকেই যদি পৌরুষ বলিয়া গণ্য করি, এবং নিজেকে সর্বত্র ও সর্বদাই অতিমাত্র প্রকাশ করাকেই যদি আত্মোপলব্ধির স্বরূপ বলিয়া স্থির করি, তবে দুঃখের নিকট হইতে আমরা কোনো মহৎ শিক্ষা প্রত্যাশা করিতে পারিব না । দেশে আমাদের যে বৃহৎ কর্মস্থানকে প্রস্তুত করিয়া তুলিতে হইবে কেমন করিয়া তাহা আরম্ভ করিব। উচ্চ চূড়াকে আকাশে তুলিতে গেলে তাহার ভিত্তিকে প্রশস্ত করিয়া প্রতিষ্ঠিত করিতে হয় । হইতে তাহার ভিত-গাথার কাজ আরম্ভ করিতে হইবে। প্রভিনশ্যাল কনফারেন্সের ইহাই সার্থকতা । প্ৰত্যেক প্রদেশে একটি করিয়া প্ৰাদেশিক প্রতিনিধিসভা স্থাপিত হইবে । এই সভা যথাসম্ভব গ্রামে গ্রামে আপনার শাখা বিস্তার করিয়া সমস্ত জেলাকে আচ্ছন্ন করিবে । প্ৰথমে সমস্ত প্রদেশের সর্বাংশের সকলপ্রকার তথ্য সম্পূর্ণরূপে সংগ্ৰহ করিবে ; কারণ, কর্মের ভূমিকাই জ্ঞান। যেখানে কাজ করিতে হইবে, সর্বাগ্রে তাহার সমস্ত অবস্থা জানা চাই । দেশের সমস্ত গ্রামকে নিজের সর্বপ্রকার প্রয়োজনসাধনক্ষম করিয়া গড়িয়া তুলিতে হইবে । কতকগুলি পল্লী লইয়া এক-একটি মণ্ডলী স্থাপিত হইবে । সেই মণ্ডলীর প্রধানগণ যদি গ্রামের সমস্ত কর্মের এবং অভাবমোচনের ব্যবস্থা করিয়া মণ্ডলীকে নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত করিয়া তুলিতে পারে তবেই স্বায়ত্বশাসনের চর্চা দেশের সর্বত্র সত্য হইয়া উঠিবে। নিজের পাঠশালা, শিল্পশিক্ষালয়, ধর্মগোলা, সমবেত পণ্যভাণ্ডার ও ব্যাঙ্ক স্থাপনের জন্য ইহাদিগকে শিক্ষা সাহায্য ও উৎসাহ দান করিতে হইবে । প্ৰত্যেক মণ্ডলীর একটি করিয়া সাধারণ মণ্ডপ থাকিবে, সেখানে কর্মে ও আমোদে সকলে একত্ৰ হইবার মুন ভুল সেইখনে ভারপ্রাপ্ত প্ৰথানের বিলিয়া সালিশের দ্বার প্রমের বিবাদ ও মামলা