পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8V9 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী গেলেই সামাজিক চক্ষুলজাটা অত্যন্ত অধিক হইয়া উঠে। টেনিস-কোর্ট নৃত্যশালা শিকার-পাটি রঙ্গমঞ্চ সংগীতসভায় স্বসম্প্রদায়ের মতামতকে সর্বদা ঠেলিয়া চলা অসামান্য বলশালী লোকের কর্ম। তৰ্কদ্বন্দ্বে বা কর্মক্ষেত্রে মতবিরোধ অনেক সময় স্বমতরক্ষার উত্তেজনাস্বরূপ হয়- কিন্তু খেলায় আমোদে আহারে বিহারে নারীকণ্ঠে বা স্ত্রীকটাক্ষে অনুক্ত এবং অর্ধেক্ত মতামতগুলি অত্যন্ত দুর্ধর্ষ। তা ছাড়া যে শাসনকর্তা রাজ্যোচিত ঔদার্যের সহিত আমাদের কথায় কৰ্ণপাত করিতে নারাজ না হন, ইংরাজ-মহলে তাহার প্রতি একটা অত্যন্ত কঠিন অপবাদ প্রচার হয়। বলে যে, তিনি ভারতবষীয় আন্দোলনকারীদের দ্বারা চালিত হইতেছেন। ইংরাজের পক্ষে এমন দুর্বলতা আর কী হইতে পারে । কিন্তু অপবাদকারীরা এ কথা ভুলিয়া যায় যে, দুর্বলের কথায় কান দেওয়া দুর্বলতার ঠিক বিপরীত- তাহাই সবলের লক্ষণ । আজকাল শাসনকর্তাদের পক্ষে শক্ত হইয়াছে ইংরাজ-সমাজের দ্বারা চালিত না হওয়া ; তাহাই তাহাদের পক্ষে দুর্বলতা। পাছে এমন কথা উঠে যে কনগ্রেসের দলবদ্ধ কাতরতায় ভুলিল সেই মনে করিয়া কোনো উদারনীতি প্রবর্তনে দ্বিধা বোধ করা, ইহাই দুর্বলতা ; ইংরাজ পত্ৰসম্পাদকের সহিত রাজসিংহাসন ভাগাভাগি করিয়া লওয়া, ইহাই দুর্বলতা। এখনকার ভারত-শাসন-ব্যাপার ভারতবষীয় ইংরাজের সামাজিকতাজালে আপাদমস্তক জড়িত এবং সেইজন্যই দুর্বল। সেইজন্য প্রেমনীতি-ক্ষমানীতির উপরে ভারতসাম্রাজ্যকে স্থায়ীরূপে প্রতিষ্ঠিত করিবার চেষ্টা যে কেবল রহিত হইতেছে তাহা নহে, তাহ প্ৰকাশ্যভাবে উপেক্ষিত অবজ্ঞাত উপহসিত, হইতেছে । সর্বপ্রকার বিচার বিবেক বিধান লঙ্ঘন করিয়া আকস্মিক জবরদস্তি-দ্বারা দুঃখিত প্ৰজাদিগকে স্তম্ভিত করিয়া দেওয়াই প্রবলের ধর্ম- এবং ক্ষমা, ধৈৰ্য, অবিচলিত অপক্ষপাত, অথবা দুর্বলের প্রতি, প্রজার প্রতি, নিরুপায়ের প্রতি পক্ষপাত দুর্বলের লক্ষণ বলিয়া প্রতিদিন কীর্তিত হইতেছে। > ○OQ Gł বরিশাল হইতে দেশবন্ধু শ্ৰীযুক্ত অশ্বিনীকুমার দত্ত মহাশয় কনগ্রেস সম্বন্ধে একটি আলোচনাপত্ৰ আমাদের নিকট পঠাইয়াছেন । আমাদের যাহা বক্তব্য তাহা সংক্ষেপে বলিতে চেষ্টা করিব। আমরা জানি, ইংলন্ডে রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য অনেক সভা আছে । এবং সময়ে সময়ে “করুন। ল প্রভৃতি বিশেষ বিধি লইয়া ইংলন্ডের অনেক উদ্যমশীল মহাত্মা অশ্রান্ত অধ্যবসায়ের সহিত স্বদেশকে স্বমতে দীক্ষিত করিয়াছেন । তঁহাদের উৎসাহ ও অধ্যবসায় বারংবার বাধা সত্ত্বেও নিরস্ত হয় না, এবং আমাদেরই বা অল্প বিয়ে কেন হয় । অবশ্য, উদ্যমশীলতায় তাহারা আমাদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সে একটা কারণ ; কিন্তু যথার্থ কারণ, তাহারা আশালতার বীজ নিজের জমিতে বপন করিতেছেন, আকাশকুসুমপ্রত্যাশী হতভাগ্য আমাদের মতো বাতাসে উড়াইয়া দিতেছেন না। গবমেন্টের সহিত তাহদের অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ । তাহদের হৃৎপিণ্ড হইতেই রক্ত সঞ্চালিত হইয়া গবর্মেন্টের হাত-পাকে কার্যক্ষম করিয়া তুলে। তঁহাদের পক্ষে দেশকে বিশেষ মতে দীক্ষিত করা এবং সেই মতের দ্বারা গবমেন্টকে চালিত করা একই কথা । কিন্তু আমাদের কনগ্রেস গবর্মেন্টের দ্বারের বাহিরে। তাহার কেবল ভিক্ষার অধিকার আছে। সেই ভিক্ষার মধ্যে এমন আশার মহত্ত্ব বা কর্মের গীেরব কিছুই নাই যাহাতে দেশকে দীর্ঘকাল উৎসাহিত করিয়া রাখিতে পারে । আমরা নিশ্চয় জানি, অনুগ্রহশ্বস্বরূপ আজ যাহা লাভ করিব কাল তাহা হারাইবার কোনো বাধা নাই। দয়া করিয়া আজ যদি আমাদিগকে কেহ স্বায়ত্তশাসন দিলেন ভাবিলাম এক পরমার্থ লাভ হইল, আবার কর্তাদের মধ্যে কাল যদি সেটাকে কেহ পঙ্গু করিয়া দেন তবে আমরা কেবল বক্ষে করাঘাত আমাদের অদূদ্ষ্টে ভারতের রাজশক্তি অনেকটা পদ্মানদীর মতো। আজ পাঁচ বৎসরে আমাদের